কোথাও ঘুরতে গেলে ছবি তোলা অবশ্যই চাই। ঘুরতে যাওয়া আর ছবিতোলা অবিচ্ছেদ্য। কেউ হয়তো একধাপ এগিয়ে বলবেন ‘‘ছবিই যদি না তুলি তবে ঘুরতে যাবো কেন?’’। তাছাড়া আজকাল ঘুরতে গিয়ে ফেসবুকে ছবি কিংবা সেলফি দিতে না পারলেতো ভ্রমণটাই মাটি হয় আর কি। আজ আপনাদেরকে ভ্রমনে ছবি তোলা বিষয়ক কিছু টিপস দিতে চাই। যাতে ছবিগুলো শুধু ২ দিনের স্মৃতি না হয় বরং সবসময়ের জন্য সুন্দর কিছু একটা হয়।
ছবি তোলার প্রস্তুতি
ভ্রমণের জন্য যেমন প্রস্তুতি প্রয়োজন তাহলে ছবি তোলার জন্যও চাই সঠিক প্রস্তুতি। এজন্য মোবাইলের সেটিং ও ব্যাটারী চার্জ সব ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে হবে। সম্ভব হলে ব্যাটারী ব্যাকআপ ও সেলফি স্টিক নিয়ে নিতে হবে। ক্যামেরা হলেও একই কথা প্রযোজ্য। নতুন কেনা ক্যামেরা বা ফোন হলে অবশ্যই আগে কিছু ছবি তুলে দেখে নিন কোন মুডে ভালো ছবি হয়। আর মেমরীকার্ডের কথা ভুলে গেলে কিন্তু চলবেনা। লম্বা ট্যুর হলে বড়ো সাইজের বা একাধিক মেমরী প্রয়োজন হতে পারে।
ওরিয়েন্টেশান
আমরা যারা মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করি তারা সবসময় ক্লোজ শর্ট আর ভার্টিক্যাল ফ্রেমে ছবি তুলি। এটা পার্সফেক্টিভ এর কারণে হয়, কারণ মোবাইলের স্ক্রিনের ওরিন্টেশান ও সাইজের কারণে এমন হয়। আর যারা ল্যাপটপ বা পিসিতে ছবি দেখেন তারা ঠিক উল্টো মানে হরাইজোন্টাল ফ্রেমে ছবি তোলেন ও এডিট করেন। যদি অনেক ছবি তোলেন আপনি দুটোই করতে পারেন। কিন্তু আপনার মাস্টার ছবি গুলো হবে আপনার চোখের ফ্রেমিং বা ক্যামেরার ফ্রেমিং মতো। এবং ফেসবুক এ পোস্ট করা মূখ্য উদ্দেশ্য হলে ফেসবুকের নির্ধারিত সাইজ অনুসারে হলেই ভালো।
ফ্রেমিং
ছবি তোলার সময় আমরা বেশীর ভাগ লোককে ফ্রেমিংটা বুঝি না। ফলে খুব সুন্দর একটা স্থানে ছবি তোলার পরও মনে হয় এই ছবির তেমন কোনো মূল্য বা দেখার কিছু নেই। অথচ ফ্রেমিং এর কারণে অনেক সাধারণ দৃশ্য অসাধারণ হয়ে যায়। ফ্রেমিং সংক্রান্ত কয়েকটা টিপস দিয়ে রাখি তবে এই বিষয়ে একটু ভালো জ্ঞান নিয়ে রাখুন ইউটিউব থেকে। পরে কাজে লাগবে।
১। ছবিতে শুধু নিজেকে হাইলাইট করবেন না। পেছনের প্রকৃতিকেও তুলে ধরুন। নিজেকে এমনভাবে মেলে ধরুন যে আপনি প্রকৃতির একটা অংশ।
২। নিজেকে ফ্রেমের মাঝে রাখবেন না। এটা ছবির সবকিছুই নষ্ট করে দেবে। যেকোনো একপাশে যান কিংবা বাম অথবা উপর কিংবা নিচে রেখে অন্যপাশে পারিপাশ্বিক পরিবেশটা নিয়ে আসুন। তারপর দেখুন ছবি কেমন হয়েছে।
৩। শুধু নিজের ছবি তুলবেন না। অন্যদেরকেও ফ্রেমে নিয়ে আসুন। ছবি এমনভাবে তুলুন যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ছবিতে কেটে না যায়। যেমন ঘরের দরজা, বিশেষ পাথর, সুন্দর একটি গাছ, কোনো দরকারী লেখা ইত্যাদি। কিংবা ছবির পাত্রপাত্রীদের শরীরের কোনো অংশ।
কম্বিনেশন
ছবি তোলায় কম্বিনেশন একটু গুরুত্বপূর্ন বিষয়। শুধু লেখা দিয়ে এটা বুঝানো মুশকিল। যেমন কালার কম্বিনেশন, কোন কালারের জামার পাশে কোন কালারের জামা দাড়াবে, সাইজ কম্বিনেশন কার পাশে কে দাড়াবে কিংবা অন্যান্য বস্তু এবং বস্তুর সাথে মানুষের কম্বিনেশন দেখতে হবে। যেমন ফুলের তোড়া আপনার কোথায় থাকবে। পুশি বিড়ালকে কিভাবে ধরবেন। পেছনের ক্যালেন্ডারের সাথে আপনার হাতের ডায়েরীটাকে কিভাবে ম্যাচ করবেন। ইত্যাদি নানা শেখার বিষয় আছে। যারা শখ করে ঘুরতে চান ও ছবি তোলেন সম্ভব হলে একটি শটকোর্স করে নেবেন। কাজে লাগবে।
টেকনিক্যাল বিষয়
ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার সেটিং আগে দেখে নেবেন। এবং বিভিন্ন সেটিংএ ছবি তুলে দেখবেন কোনটা ভালো লাগে। ইনডোন আউটডোর সকাল বিকালের সেটিংগুলো বুজে নেবেন। বিভিন্ন ধরনের অপশন বুঝে নিয়ে আগেই কিছু প্রাকটিস করে দেখবেন এই ক্যামেরায় কোন সেটিংএ ভালো আসে।
সম্পাদনা
প্রয়োজনে ছবি সম্পাদনা করে নেবেন। ইমেজ কালার ও ইফেক্ট একটা ভালো দিক। ছবি তোলার সময় পর্যাপ্ত জায়গা রাখলে ছবি এডিট করা সহজ হয়ে যায়। এডিটের সময় সাইজ ওরিন্টেশান ও ইফেক্ট এর বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারেন। ফটোগ্রাফার হিসেবে আপনার নাম জলছাপে দিতে পারেন। ছবি সম্পাদনা করার সময় প্রেমিং এবং কম্বিনেশান খেয়াল করুন। ভালো ছবিগুলো বিভিন্ন সাইজে এডিট করতে পারেন যাতে করে বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।
শেয়ার পোস্ট
একসময় ছবি মানুষ দেয়ালে লাগানো কিংবা এ্যালবামে ভরে রাখতো। যুগ বদলে গেছে। এখন দেয়ালে লাগানো মানে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া। আর এ্যালবামে রাখা মানে হলো ফেসবুকের এলবামে রাখা। তাই সেভাবে ছবি তুলুন ও এডিট করুন। যতি প্রোফাইল পিকচার দিতে চান তাহলে প্রোট্রেট করুন আর যদি কভার পিকচার দিতে চান তাহলে বামপাশে নিচের জায়গাটাতে যেন কোনো গুরুত্বপূর্ণ অবজেক্ট না থাকে খেয়াল করুন। কভার ফটোর সাইজের কথা মাথায় রাখন। অনেকে সাইজতো য়েখাল করেনইনা পোস্ট করার সময়ে ছবির পজিশনও দেখেন না ফলে দেখা যায় ছবি ঠিকই আছে কিন্তু মুখটাই দেখা যাচ্ছেনা। তাই এসব ব্যাপারে খেয়াল করুন।
অনেকে সফরে গেলে সেলফি তোলার জন্য বেদিশা হয়ে যান। মনে রাখবেন সেলফি ছবি তোলার মূল পন্থা নয় এটা জরুরী একটা অপশন বটে যাতে আপনি নিজে ফেমে থেকে ছবিটা তুলতে পারেন।