মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম উপজেলা হিসেবে শ্রীমঙ্গলের নাম এখন দেশ ছেড়ে বিশ্বখ্যাত হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গলের পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শ্রীমঙ্গল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পর্যটনও অনন্য মডেল হতে পারে। চায়ের রাজধানী হিসেবে শ্রীমঙ্গল সারাবিশ্বে পরিচিত। মূলত চা-শিল্পকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এই পর্যটন কেন্দ্র। সারা বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত থাকে শ্রীমঙ্গল।
শ্রীমঙ্গলের চারিদিক ঘেরা সবুজে সমারোহে সজ্জিত সারি সারি চা বাগানের নয়নাভিরাম দৃশ্য যেন অবলীলায় মুগ্ধ করে পর্যটকদের। দেশের একমাত্র উৎপাদিত গ্রিন টি (সবুজ চা) এর ফ্যাক্টরি কেবল শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া ডিভিশনের জাগছড়া চা বাগানেই আছে। ঘুরে দেখার মতো এখানে রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, টি মিউজিয়াম, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, বিস্তীর্ণ হাইল হাওর, মৎস্য অভয়া-শ্রম বাইক্কা বিল, মিনি চিড়িয়াখানা, বার্ড পার্ক, নীলকন্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, চা কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি-৭১ সহ নানা পর্যটন স্পট। এছাড়াও লাল পাহাড়, শংকর টিলা, গরম টিলা, ভাড়াউড়া লেক, রাজঘাট লেক, কালীঘাট লেক, চেইনবাড়ি পাহাড়ডুবা লেক, বৃটিশদের সমাধিস্থল ডিনষ্টন সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ্ মাঠ, ঝাউ বনসহ আরো কতকিছুই না আছে এখানে। রয়েছে মুসলিমদের পবিত্র স্থান জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, হিন্দুদের তীর্থস্থান নির্মাই শিববাড়ি।
চা বাগান ঘেরা পাহাড়ের উঁচু নিচু টিলা ঘেঁষে কোথাও কোথাও দেখা যায় গারো, খাসিয়া, টিপড়া, মনিপুরীসহ নানান জাতির বাস। এসব আদিবাসী উপজাতিদের ঘিরে রয়েছে আবার পৃথক পৃথক ইতিহাস ঐতিহ্য সংবলিত অনেক দৃশ্য। খাসিয়া পল¬ীতে রয়েছে পানের জুম চাষ, গারো ও টিপড়া পাড়ায় লেবু আনারসের বাগান আর মনিপুরী পাড়ায় রয়েছে মনিপুরী হস্তশিল্পের বিশাল মেলা। শ্রীমঙ্গলের চা-পাতা, লেবু, আনারস, মনিপুরী হস্তশিল্প আর বাঁশ বেতের তৈরি কুটির শিল্পসমূহ অনায়াসে নজর কারে সকল পর্যটকদের।
থাকার জন্য এখানে রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান সহ আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট দুসাই, নভেম রিসোর্ট, টি হ্যাভেন, শ্রীমঙ্গল ইন, গ্রীণ লিফ, লেমন গার্ডেনসহ ছোট বড় প্রায় অর্ধ শতাধিক রেস্টহাউজ। উন্নত খাবারের জন্য রয়েছে গ্র্যান্ড তাজ, সুলতান, আগ্রা চাইনিজ, কুটুমবাড়ি, শ্বশুরবাড়ি, সাতকরা, পানসী, পাচভাই, নূর ফুডস্ সহ বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক হোটেল।
পর্যটকদের নিরাত্তার জন্য শ্রীমঙ্গলে র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে পৃথক ট্যুরিস্ট থানা। এছাড়া পর্যটন সহায়তার জন্য এখানে কাজ করছে ট্যুর গাইড এসোসিয়েশনের বেশ কয়েকজন সদস্য। তাই দেরি না করে এই শীতে ঘুরে আসুন শ্রীমঙ্গল আর মন মাতানো আনন্দে উপভোগ করুণ শ্রীমঙ্গলের সকল পর্যটন স্পটগুলো।