একঘেয়ে জীবন যাত্রায় মানুষ যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন তার অন্তত কিছু সময়ের জন্য একটু আরাম,একটু বিরাম,একটু শান্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সৃষ্টিকর্তার অপরময় সৃষ্টির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য কাছে বা দূরে কোথাও। ভ্রমণ করে না অথবা করতে চায় না এমন মানুষ এই দুনিয়ায় পাওয়া বড় দুষ্কর। একজন পর্যটক হিসেবে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সারা বিশ্ব। দেশের বাইরে ঘুরে আসতে চান? তবে স্বদেশ মূল্যে ঘুরে আসতে পারেন বিদেশ। আর এই বিদেশ অন্য কোন দেশ নয়। আমাদেরই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। যে দেশের মধ্যে রয়েছে একদিকে মরুভূমি, অন্যদিকে বরফ আচ্ছাদিত পাহাড়, পর্বত, সমুদ্র, জঙ্গল, স্থাপত্য, পুরাকৃর্তি ইত্যাদি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে সব ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত সম্ভার। প্রবাদ আছে, ‘সমগ্র ভারত ভ্রমণ করলে পৃথিবীর অর্ধেক দেখা হয়ে যায়’। আর আপনি যদি একজন পর্যটক হিসেবে ভারতে ভ্রমণ করতে চান, তবে তার আদি গোড়াপত্তন ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা দরকার।
এই মুসলিম শরিফ তীর্থ আজমের শহরটি আজকের নয়। পাহাড় বেষ্টিত আনা সাগরের তীরে ৪৮৬ ফুট উচ্চে রমনীয় পরিবেশে সবুজ মরুদ্যানের মত রুপ পেয়েছে শহর। ধর্ম, ইতিহাস আর স্থাপত্য তিনেরই সমন্বয় ঘটেছে এখানে। তেমনই সর্বধর্ম সমন্বয়ে মিলনক্ষেত্র ও পূণ্যভূমি এই আজমের। কথিত আছে ৭ বার আজমের দর্শনে ১ বার মক্কা দর্শণের পূণ্য মেলে।
শহর গড়ার ইতিহাসঃ
সপ্তম শতকে অজয় পাল চৌহানের হাতে গড়ে ওঠে আজমের শহর। কারও মতে আজমের নামেই শহরের নামকরণ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন অজয় মেরু পর্বত থেকেই আজমের নাম হয়েছে। পূর্বের অজয়মেরুর দূর্গটিরনাম এখন তারাগড় দূর্গ।
১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে পৃথ্বিরাজ চৌহাননকে হারিয়ে গজনীর মোহাম্মদ ঘোরী আজমের দখল করেন। সেই থেকে শুরু হয় ক্ষমতা দখলের লড়াই।
১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তৈমুর লঙ ভারত আক্রমন করে অবাধে লুটতরাজ, খুন-জখমের বন্যা বইয়ে দিয়ে অত্যাচারের রোলার চালিয়ে চলে যাবার পর রানা কুম্ভ কিছুদিন আজমীরের রাজা হন। কিন্তু ১৪৭০ থেকে ১৫৩১ পর্যন্ত আজমের মলোয়ার সুলতানদের দখলে থাকে। ১৫৫৬ তে আজমের একটি দূর্গও গড়ে তোলেন। তবে তিনি স্বয়ং এখানে আসেন ১৫৬১ তে এবং এখানে তার কীর্তি তুলে ধরেন নানা দূর্গ, মসজিদ ও স্থাপত্য শিল্পকলার মাধ্যমে। তার সেই সব স্থাপত্যের নিদর্শন আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
১৬১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারী ব্রিটিশ দূত স্যার টমাস রো তারাগড় দুর্গে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে প্রথম দেখা করে ভারতে ব্যবসা বাণিজ্যের অনুমতি চায়। টমাস রোকে ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুমতিও দেন জাহাঙ্গীর।
জাহাঙ্গীরের বেগম নূরজাহানের প্রিয় ছিল আজমেরের গোলাপে তৈরি আতর। শাহজাহান তার প্লেজার রিসটটিও এখানেই গড়ে তুলেছিলেন। এই আজমেরেতেই শাহজাহানের জেষ্ঠ পুত্র দারার জন্ম হয়। ১৬৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ঔরঙ্গজেব আজমীরের কাছে ডোরালে ভাইদের হারিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। ঔরঙ্গজেবের পর আজমের দখল করেন সিন্ধিয়ার রাজারা। ১৮১৮ সালে ব্রিটিশের হাতে আজমেরের ক্ষমতা কায়েম হয়। আজমীর রেল স্টেশানের বিপরীতে জুবলি ক্লক টাওয়ারে এডয়ার্ড মেমোরিয়াল হল, বৃটিশ স্থাপত্যের সাক্ষ্য বহন করছে।
অতীতের রাজ বংশীয় স্কুল বর্তমানের মেয়ো কলেজ অতীতেতের সাক্ষ্য বহন করছে। রেল স্টেশনের কাছে ১৮৮৮ তৈরী ভিক্টোরিয়া ক্লক টাওয়ারটি এখন জীর্ন। এরই কাছে আছে মীর সাজত আলি মসজিদ। বিখ্যাত কবি মীর্জা গালীব রোজ এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসতেন।
স্টেশনের বিপরীত মাদার গেট পেরিয়ে দোকানে ঠাসা ১০/১৫ মিনিটের ঘিঞ্জি পথ পেরিয়ে চলে আসুন পুরানো শহরে। এখানেই আজমীরের অন্যতম পূণ্যতীর্থ দরগা শরীফ।
দ্বাদশ শতকের সুফি ধর্মগুরু খাজা মইনুদ্দীন চিস্তি হিন্দু ও মুসলিম তথা সর্ব ধর্মের লোকদের কাছে পরম শ্রদ্ধেয়। মুসলিম ধর্শালম্বীদের কাছে এটি পরম পবিত্র তীর্থ। এখানে সর্ব ধর্মাবলম্বীদের জন্যই অবারিত দ্বার। এখানে খালি পায়ে মাথা ঢেকে আসতে হয়। তবে চামরের পরশ বুলিয়ে ফকিরদের চাঁদা নেওয়া বড়ই বিসদৃশ লাগে।
দরগা শরীফ গড়ার ইতিহাসঃ
আকবরের ধর্মগগুরু খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে মহম্মদ ঘোরীর সঙ্গে ভারতে আসেন।
কিংবদন্তী প্রবাদপুরুষ খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি ১১৪২ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের সঞ্জারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি মক্কা হয়ে মদীনায় যাওয়ার পথে আল্লাহর নির্দেশ পান যে, তাকে ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মের মহাত্ত প্রচার করতে হবে। তিনি তখন ভারতে আসেন। এই আজমীরেই আস্তানা করে বিভিন্ন স্থানে ইসলাম ধর্মের প্রচার করতে থাকেন। ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ৯৪ বছর বয়সে এই আজমীরেতেই তার জীবনাবসান হয়। এখানেই তাকে সমমাধিস্থ করা হয়। এটাই আজমীর শরিফ।
দরগাতে যা আছেঃ
ভেলভেটে মোড়া শ্বেত মর্মরের সমাধি বেদী, রূপোর রেলিং দিয়ে ঘেরা, সোনায় মোড়া গম্বুজাকৃতি সিলিং। ভক্তরা এখানে ফুল চাদর চড়ান। এই সমাধী বেদীর অদূরে আছে মৈনুদ্দিন চিস্তির কন্যা বিবি হাফিজ জামাল ও শাহজাহান কন্যা চিমনি বেগমের সমাধি। এই মাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে দুটি মসজিদ, একটি সম্মেলন কক্ষ। রুপার পাতে মোড়া বুলন্দ দরজা।
১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে দাস সুলতান ইলতুতমিশ এই মসজিদের নির্মান কাজ শুরু করেছিলেন আর ১৬ শতকে মোঘল স¤্রাট হূমায়ূনের হাতে এটি শেষ হয়। এর প্রবেশদ্বারটি তৈরি করেছিলেন হায়দারাবাদের নিজাম। ডাইনে আকবরী মসজিদ ৩২৩ মিটার উচু মূল প্রবেশদারের বুলন্দ দরওয়াজা। ১৫৭০-৮০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রতি বছর আগ্রা থেকে পায়ে হেটে স¤্রাট এই দরগায় আসতেন। জাহাঙ্গীরও এখানে মসজিদ গড়েন।
১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে শাহজাহান শ্বেত পাথরের জুমা মসজিদ তৈরি করতেন এখানে। এই মসজিদের চূড়াটি সোনার পাতে মোড়া। বর্তমান রজব মাসের (এপ্রিল-মে) ১-৬ মৈনুদ্দিন চিস্তির মৃত্যু দিবসে উরস উৎসব পালিত হয়। ৬ষ্ঠ দিনে ১১ টায় সাধারণের জন্য দরগার দ্বার বন্ধ হয়ে যায়। ঐ সব দরগার খাদিম বা তত্ত্বাবধায়ক এক বছরের জন্য নিয়োজিত হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কাওলী গান পরিবেশিত হয়। লোকশ্রুতি আছে একই যাত্রায় দরগা দেখার পর দিল্লীর নিজামুদ্দিন আওলিয়ার দরগা দেখে ফিরতে হয়, তবে পুণ্য সম্পূর্ণ হয়।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে বাস অথবা বিমান যোগে কলকাতা। কলকাতা থেকে বিমান অথবা ট্রেন যোগে দিল্লী। এর পর সড়ক বা ট্রেনযোগে আজমির শরীফ অথবা সরাসরি কলকাতা থেকে আজমির।
বাঙালী অধ্যুষিত আজমির শরীফ মাজরের আশে পাশে আপনার পছন্দমত যে কোন এলাকায় বিভিন্ন মূল্যমানের হোটেলে থাকা ও খাওয়াদাওয়া করতে পারেন। অথবা খাদেমদের বাড়িতে বিনা মূল্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
Office Address:
Trip Silo Office Adress: House # 477 (2nd Floor), Road # 32, New DOHS, Mohakhali. Dhaka # 1206.
Contact Number: 01689777444 , 01873111999
Office: +88 09678 111 999
www.tripsilo.com