মালদ্বীপ ভ্রমন করতে হলে আপনাকে আগে ২, ৩ টি দেশ ভ্রমন করা থাকলে ভালো হয়। থাকতেই যে হবে এমন নয়। থাকলে বেশি ভালো হয়। তাতে ইমিগ্রেশন পাস করতে পারবেন খুব সহজে। চলুন সরাসরি কাজের কথায় চলে যাই।
অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ গঠিত। পানি অত্যন্ত পরিষ্কার। নীল বর্নের পানি। দেশটির আয়তন ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার। সর্বমোট জনসংখ্যা ৪,১৭,০০০। মুদ্রার নাম হলো মালদিভিয়ান রুফিয়া। খুব ভালো মানের পরিবহন ব্যবস্থা ও প্রশস্ত রাস্তা। জানজট একদম নেই। হাটার জন্য আলাদা ফুটপাথ রয়েছে। মানুষের গায়ের রং বাংলাদেশের মানুষের মতোই। অনেকাংশেই ছেলেদের চুল বড় বড় ও দাড়ি বড় বড়। সবাই ইংরেজী বুঝতে পারে ও বলতেও পারে। এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যেতে হলে ফেরী ছাড়া উপায় নেই। আয়তন কম হওয়াতে আপনি একটিমাত্র হোটেলে থেকেই পুরু মালদ্বীপ ঘুরে দেখতে পারবেন। আপনি ডিসকোভারি চ্যানেলে সামুদ্রিক যে সৌন্দর্য দেখেছেন তা নিজ চোখে দেখতে চাইলে মালদ্বীপে আপনাকে স্বাগতম।
১। পাসপোর্ট (ছয়মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)
২। বিমান টিকিট (অবশ্যই রিটার্ন টিকিট সহ )
৩। হোটেল বুকিং (যে কয়দিন থাকবেন সকল দিনের জন্য, একদিনের জন্য করলে জবাবদিহি করতে হয়)
৪। পর্যাপ্ত ডলার (১০০০ ডলার বা তার বেশি )
৫। ভালো যোগাযোগ দক্ষতা (ইংরেজীতে)
৬। আপনার চাকরি বা ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (ট্রেডলাইসেন্স, ট্যাক্স রিটার্ন ইত্যাদি)
৭। ভিসা লাগে না। আপনি সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলে মালদ্বীপ এয়ারপোর্ট আসার পর অন এরাইভাল ভিসা পাবেন।
এইগুলিও একটিও যদি বাদ যায় তাহলে আপনাকে ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত ও যেতে হতে পারে। তাই খুব যত্ন সহকারে সবগুলি জিনিস সাথে রাখবেন। কাগজের ফটোকপি সাথে রাখবেন প্রমান হিসাবে।
এটি বলা আসলেই মুশকিল। কারন এক জন এক এক টাইপের খরচ করে। আমি আমার ষ্টাইলে যা যা খরচ পড়েছে তা লিখতে পারবো শুধু ধারনা দেওয়ার জন্য। তবে মনে রাখবেন যে, একজন হলে খরচ বেশি পড়ে। দুইজন হলে কিছুটা সাশ্রয় হয়। যেমন হোটেল রুম ভাড়া ২ জনের জন্য ও একজনের জন্য সমান। তবে জেনে রাখা ভালো যে, মালদ্বীপ আপনি একরাতে লাখ টাকা সহজেই খরচ করতে পারবেন। কারন অনেক অনেক আইল্যান্ড আর লাক্সারী সব রিসোর্ট যা প্রতিদিন ২০০০ ডলার বা তার ও বেশিও আছে। আপনাকে হিসেব করে করে বের করতে হবে কোনটা সাশ্রয়ী। আপনি যদি রিসোর্টে রাতে থাকতে চান তাহলে অহেতুক খরচ অনেক বেশি। আপনি একটা হোটেলে থাকবেন ও রিসোর্টে শুধু ডে পাস প্যাকেজ নিয়ে যাবেন তাহলে খরচ ও কম হবে আর দেখতে পারবেন সবকিছু।
বিমান টিকিটঃ জনপ্রতি শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স রিটার্ন ফ্লাইট সহ ৪০,০০০ টাকার মতো। +- হতে পারে।
হোটেল বুকিংঃ দুইজনের থাকার জন্য প্রতি রাতের খরচ ৬৬ ডলার অন এভারেজ। ব্রেকফাষ্ট সহ। ( Hotel Beach Palace, Hulhumale).
তো সব মিলিয়ে আপনি যদি জনপ্রতি ৪০,০০০ টাকা (বিমান ভাড়া) ও প্রতি দিনের জন্য ১০০ ডলার বাজেট রাখেন তাহলে বেশ ভালোমতোই থাকতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন যত বেশি রাইড ও রিসোর্ট নিবেন ততই খরচ বাড়বে যার কোন শেষ নেই। সেটা আপনার উপর নির্ভর করে।
ডলারঃ নগদ ডলার আপনি এজেন্সী থেকে এনডোর্স করিয়ে নেতে পারবেন বাংলাদেশে এয়ারপোর্ট থেকে। অথবা আপনি ক্রেডিট কার্ড ও এসডোর্স করিয়ে নিতে পারবেন আপনার ব্যাংক থেকে। আপনি চাইলে বিভিন্ন ব্যাংকের ট্রাভেল কার্ড নিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন ক্যাশ এর প্র্রাধান্য দেয় বেশি ইমিগ্রেশনে। তাই ক্রেডিট কার্ড নিলেও অন্তত ৫০০ ডলার ক্যাশ নিতে ভুলবেন না।
আপনি যদি সি ফুড ও মাছ পছন্দ করে তাহলে তো আপনার জন্য স্বর্গতুল্য হবে। নানান রকম মাছ পাওয়া যায়। তাছাড়া খাবার দাবার ও বেশ ভালো। বাংলাদেশীদের কোন সমস্যা হবার প্রশ্নই ওঠে না। দাম ও হাতের নাগালের মধ্যে। তবে বাংলাদেশ থেকে একটু বেশি।
এক কথায় দারুন। আপনি যদি হানিমুনে আসেন তাহলে ইমিগ্রেশনে বেশ ছাড় পাবেন। কারন সদ্য বিবাহিতরা তো আর এখানে থাকতে আসবে না। তারা ঘুরে আবার চলে যাবে। তাই এটি একটা প্লাস পয়েন্ট। আর আপনি যদি ভিসা ছাড়া কোন দেশে ঘুরে ইউরোপের ফিল পেতে চান তাহলে মালদ্বীপ অত্যন্ত উপযুক্ত একটি জায়গা। দেশটি ছোট হলেও উন্নত ব্যবস্থা আপনাকে মুগ্ধ করবে। আপনি যদি হুলেমাল নামক স্থানের বিচ প্যালেস নামক হোটেলে থাকেন তাহলে বাংলাদেশী আতিথেয়তায় থাকতে পারবেন ও বউ নিয়ে সন্ধাবেলা ফ্রিতে সাগর পারে আড্ডা দিতে পারবেন। আহা কি যে অনুভুতি!
তো আপনি টিকিট কেটে শ্রীলংকা হয়ে মালদ্বীপ এয়ারপোর্টে পৌছালেন। এবার আপনাকে তাদের প্রথম ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে যেতে হবে। আপনি কেনো এসেছেন ও আপনার পেশা সহ যাবতীয় জিনিস জানতে চাইতে পারে। তাই আপনার সকল কাগজপত্র হাতের কাছেই রাখুন। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার পাসপোর্টে সিল মেরে দিবে। তারা যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি। দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই।
এয়ারপোর্ট পাস করার পর আপনার প্রথম গন্তব্য হলো আপনার হোটেল।আপনার খেয়াল রাখতে হবে যে, যদি আপনার হোটেল বুকিং এর মধ্যে ট্রান্সফার সার্ভিস অন্তর্ভুক্ত থাকে তাহলে আপনার হোটেলের গাড়ি আপনার জন্য এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করবে। আপনাকে তা খুজে নিতে হবে। তা না হলে আপনাকে অন্য কোন পরিবহনে করে আপনার হোটেলে যেতে হবে। আপনি কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন এ ব্যাপারে।
হোটেল বুকিংঃ বলে রাখা ভালো যে, মালদ্বীপ এয়ারপোর্টের একদম কাছাকাছি ও একমাত্র সড়কপথ হলো হুলোমালে নামক শহর। যেখানে আপনি সরাসরি বাসে করেও যেতে পারবেন। অন্য যেখানেই যান না কেনো আপনাকে বোট বা ফেরী ব্যবহার করতে হবে। তাই যথাসম্ভব চেষ্ঠা করবেন হুলেমাল থাকার জন্য। এখানে আপনি ৩০ ডলার থেকে ৬০ ডলারের মধ্যে থাকার হোটেল পেয়ে যাবেন। একটা কথা না বললেই নয় যে, এখানে আপনি ১০০০ ডলারের হোটেল ও পাবেন। সেটা আপনার ব্যাপার।
হোটেলে পৌছানোর পর আপনি পাশের সী ভিও উপভোগ করতে পারবেন। বিশেষ করে আপনি যদি Beach Palace, Holhumale তে থাকেন তাহলে আপনি মাত্র ১ মিনিট হাটলেই ফ্রি ফ্রি সমুদ্রের পাড়ে বসে সময় কাটানোর একটা দারুন জায়গা পেয়ে যাবেন।
এবার আপনাকে খুজতে হবে মালদ্বীপের আসল সৌন্দর্য। যা আপনি ভালো রিসোর্টে না গেলে পাবেন না। অন্তত একটা ভালো রিসোর্টে একদিন কাটাতে পারেন। দুইটি উপায়ে আপনি রিসোর্টে থাকতে পারেন। একটি হলো তাদের রিসোর্টের রুম ভাড়া করে ও আরেকটি হলো রাতে না থেকে শুধু মাত্র ডে পাস প্যাকেজে ভিজিট করে।
Kani Club Med:
এটি একটি ফাইভষ্টার রিসোর্ট। অত্যন্ত চমৎকার একটি রিসোর্ট যা আপনার ভালো লাগবেই। ডে পাস প্যাকেজের দাম ১৬৫ ডলার। আপনি হোটেলের রিসিপশনে কথা বললেই Kani Club Med এর নাম বললেই তারা আপনাকে সব ব্যবস্থা করে দিবে। সকাল ৯ টায় যাবেন ও বিকাল ৫ টায় চলে আসবেন। এর সাথে আপনার লাঞ্চ বুফে থাকবে ফ্রি ও আনলিমিটেড ড্রিংকস পাবেন। দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত যত ইচ্ছা তত খাবেন। সাথে সেইলিং রাইড ও স্নোর্কলিং রাইড ফ্রি পাবেন। আর আপনি সেইলিং করতে পারবেন যত ইচ্ছা তত। এক্সট্রা কিছু রাইড পাবেন যা আপনাকে আলাদা পে করে করতে হবে। যেমনঃ প্যারাসেইলিং, ফ্লাই ডাইভিং, জেট ক্সি ইত্যাদি। আর আপনি পুরু আইল্যান্ড ঘুরে দেখতে পারবেন ফ্রি। মনে রাখবেন যে, স্নোর্কলিং হচ্ছে নাকে পাইপ লাগিয়ে সাতরে সমুদ্র দেখা। যা দুপুর ২ টায় শুরু হয়। তাই আপনাকে আগে রিসিপশনে কথা বলে টাইম সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। তা না হলে অনেক রাইডের ক্ষেত্রে টাইম অমিল হয়। তাই আগে থেকে জেনে নেওয়াই ভালো হবে। এটিতে একদিন পার করলে আপনার পয়সা উসুল হয়ে যাবে। এটি দেখলে আপনি মালদ্বীপের অনেকটা ধারনা পেয়ে যাবেন। এখানে যেতে হলে আপনার হোটেল থেকে আপনাকে তারা নিয়ে যাবে ও আপনাকে দিয়ে যাবে।যাতায়াত খরচ সহই দাম নেওয়া হয়। এখানে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনি শর্টপ্যান্ট ও পানিতে নামার প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় সাথে রাখবেন। কারন রিসোর্ট এর ভিতর থেকে কোনকিছু কিনতে গেলে তা ১০ গুন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে।
Local Island:
প্রথমে তো গেলো ৫ ষ্টার রিসোর্ট। এবার আপনি তাদের স্থানীয় ঘড়বাড়ি দেখার জন্য যেতে পারেন লোকাল আইল্যান্ড এ। ডে পাস প্যাকেজের দাম ৯৯ ডলার।এখানে একটি ফোর ষ্টার হোটেল ও রয়েছে। যেখানে আপনি দুপুরের লাঞ্চ ফ্রি পাবেন প্যাকেজের সাথে। এখানে একটি জায়গা আছে যেখানে আপনি দেখতে পারবেন ন্যাচারাল মাছ। যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এখানে যেতে হলেও আপনার হোটেল থেকে আপনাকে তারা নিয়ে যাবে ও আপনাকে দিয়ে যাবে।যাতায়াত খরচ সহই দাম নেওয়া হয়।
Male:
মালে হলো তাদের রাজধানী। হুলেমাল থেকে আপনাকে প্রথমে হুলেমাল ফেরী টার্মিনাল যেতে হবে। তারপর আপনি মালের ফেরীতে ওঠে মালে ফেরী টার্মিনালে গিয়ে পৌছাবেন। ভাড়া ১৬ রুফির মতো। তার পর আপনি মালে ঘুরে দেখতে পারবেন। একই পথে আপনাকে ফিরতে হবে।
ডাইভিংঃ আপনি যদি সাগরের নিচে গিয়ে স্কুবা ডাইভিং করতে চান তাহলে আপনি হুলেমাল Beach palace হেটেলের থেকে মাত্র ৫-৭ মিনিট হাটলেই একটি ডাইভিং ক্লাব পেয়ে যাবেন। নাম নলো Ocean Junkeis. একটু গুগল সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন। দুইটি ডাইভিং এর জন্য খরচ হবে ১৬৫ ডলারের মতো। যদি ক্যামেরা থাকে আপনার তাহলেই ভালো। আলাদা কোন খরচ নাই। তবে ক্যামেরা নিতে হলে আরো ৪০-৬০ ডলার লাগবে। এ ডাইভিং ক্লাবে যোগাযোগ করলে আপনি ফিসিংয়েও যেতে পারবেন। তা আপনার উপর নির্ভর করে। ডাইভিং করার জন্য আগে আপনাকে ট্রেনিং নিতে হবে। তাই হাতে পুরু একদিন সময় নিতে হবে ডাইভিং করার জন্য।
এ্ই গেলো ৪ দিন। বাকি ২ দিন আপনি হুলেমাল সী বীচ দেখে দেখে কাটিয়ে দিতে পারবেন। এই তিনটি জায়গা দেখলেই আপনি মালদ্বীপ সম্পর্কে সকল ধারনা পেয়ে যাবেন বলেআশা করি। তবে হ্যা, আপনি চাইলে আরো কয়েকটা ফাইভষ্টার রিসোর্ট ভ্রমন করতে পারেন যা নির্ভর করে আপনার উপর।
Office Address:
Trip Silo Office Adress: House # 477 (2nd Floor), Road # 32, New DOHS, Mohakhali. Dhaka # 1206.
Contact Number: 01689777444 , 01873111999
Office: +88 09678 111 999
www.tripsilo.com