সন্দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকুলে অবস্থিত একটি দ্বীপ । এটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর পূর্বকোনে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত । চতুর্দিকে নদী আর সাগর বেষ্টিত এই ছোট্ট দ্বীপ সন্দ্বীপ । শত বছরের পুরনো অতিহ্য ইতিহাসে ভরপুর । মনোরম স্নিগ্ধ পরিবেশ মুক্ত হাওয়া মনে হয় পৃথিবীর আর কোথাও নেই ।
সন্দ্বীপ ভ্রমণে আপনাকে (বঙ্গোপসাগরের মোহনা )এ নদীর উপর দিয়ে যেতে হবে । ভয় চিন্তা হচ্ছে এত বড় নদী আর সাগরের কথা শুনে । ঝেড়ে ফেলুন আপনার সকল চিন্তা । ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য এখনি সঠিক সময় দ্বীপ ভ্রমণ করে আসার । বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়িয়েছেন পাহাড় দেখেছেন পর্বত দেখেছেন সমুদ্র দেখেছেন । আপনার ভ্রমণের আনন্দ কে দ্বিগুণ করতে এবার না হয় সন্দ্বীপ থেকে ঘুরে আসুন । এত্ত এত্ত বড় নদী !!সাহস হচ্ছে না !! ব্যাপার না ম্যান । ভ্রমণ করতে গেলে একটু সাহস লাগে ভয় থাকলে ভ্রমণের মজাই থাকে না । আপনার জন্য সুখবর হল শীতের এই মৌসুমে বেশী সময় নিয়ে নদীতে থাকতে হবে না । বড়জোর মাত্র ত্রিশ মিনিট সময় থাকতে হবে । এই সময়ে নদী অনেক কোমল । সাতার জানলে তো সাঁতরাতে ইচ্ছা করবে । এখন কি একটু সাহস হচ্ছে ? তাহলে আর দেরী কেন দলবেঁধে অথবা দুইজন মিলে যেভাবেই সুবিধে বেড়িয়ে পড়ুন । ঘুরে আসুন সন্দ্বীপ থেকে আর চমকে দিন সবাইকে ।
কিভাবে যাবেন ?
খুবসহজে হেলিকপ্টার করে যেতে পারেন । তবে এটা ব্যায়বহুল । সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাহিরে ।
এছাড়া নৌ পথকে বেঁচে নিতে হবে । নৌ পথের ভ্রমণের আনন্দ অন্যরকম , অন্যান্য ভ্রমণের চেয়ে একেবারেই আলাদা । নৌ পথের অন্যতম মাধ্যম হল –
স্টীমার , লঞ্চ ,স্পীডবোট ।
ষ্টীমার – জাহাজে ভ্রমণ । এই ভ্রমনের মজা অনেক । সময় সাপেক্ষ আনন্দ আছে বটে । এজন্য আপনাকে যেতে হবে সদরঘাট । সপ্তাহে তিন দিন এই সার্ভিস থাকে সকাল ৯ টায় সদরঘাট ছেড়ে যায় সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে । বর্তমান সময়ে এই ভ্রমণে একটু সমস্যা হবে, বিরক্ত বোধ করতে পারেন । তার অন্যতম কারন হল সন্দ্বীপের পশ্চিমে জেগে উঠা চর । যার কারনে উঠা নামাতে দীর্ঘ সময় এবং কষ্ট পোহাতে হবে ।(আপাতত এই সার্ভিসটি বন্ধ আছে)
লঞ্চ- এই দ্বীপের মানুষেরা বলে থাকে ট্রলার । কাঠের তৈরি অনেকটা নৌকার মতই । এতে করে যেতে পারেন । এজন্য আপনাকে যেতে হবে কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট । এখানে যাত্রী বহনযোগ্য লঞ্চ আছে , সাথে মাল বোঝায় করে এমন লঞ্চে করে যেতে পারেন । এটাতে সময় বাচবে খরচের পরিমাণ ও কম । উঠা নামায় খানিকটা সমস্যা হবে । এ যাত্রায় আনন্দ আছে তবে অতিরিক্ত যাত্রী , মাল বোঝায় থাকার কারন সেই আনন্দ ফিকে হতে পারে ।
স্পীডবোট- দ্বীপে আসা যাওয়ার জন্য বর্তমান সময়ের অন্যতম বাহন । দ্রুতগতি সম্পন্ন এই বাহন মাত্র কয়েক মিনিটে আপনাকে দ্বীপে পৌঁছে দিবে । এক্ষেত্রে গুনতে হবে ৩০০ টাকা ।
এ ভ্রমনে আনন্দ আছে সময়ও বাঁচবে । উঠা নামায় সমস্যা কাদা মাখামাখি করতে হবে না । একাধিক সঙ্গী হলে একটা বোট ভাড়া করে যেতে পারেন ।একজন বা দুইজন হলে নরমালি যাওয়ায় ভালো । এজন্য আপনাকে যেতে হবে কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট । আরও দুই একটা ঘাট রয়েছে তবে সন্দ্বীপ শহরে যেতে এটাই সহজ পথ এটাই বেস্ট ।
কুমিরা যাবেন কিভাবে ?
একেবারেই সহজ দেশের যেই প্রান্তে থাকুন না কেন আপনাকে চট্টগ্রাম আসতে হবে । (সড়ক যোগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে কুমিরা হয়ে আসতে হবে ,সেক্ষেত্রে চাইলে সরাসরি কুমিরাতেই নামতে পারবেন ) । চট্টগ্রাম শহরের যে কোন জায়গা থেকে সরাসরি চলে আসতে পারেন কুমিরা । সহজ এবং সময় বাচাতে ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন । সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খরচ পড়বে ।
এই তিনটি মাধ্যমের যেকোন একটি আপনি বেঁছে নিতে পারেন । আমি বলব এই সময়ে ভ্রমণ সুখকর করতে স্পীড বোট টাই নিরাপদ এবং আনন্দদায়ক ।
ধরে নেওয়া যাক আপনি সন্দ্বীপ ঘাটে পৌঁছে গেছেন । তাহলে কি করবেন ?
প্রথমে ঘাট থেকে সন্দ্বীপ টাউন কমপ্লেক্স আসতে হবে । ট্যাক্সি ভাড়া করে আসা বেটার ১৫০ টাকা খরচ পড়বে । এখানে স্বল্পমূল্যে থাকার জন্য গেস্ট হাউজ রয়েছে । খাওয়ার জন্য ভালো মানের কিছু রেস্টুরেন্ট পাবেন হাতের কাছেই ।
তাবু করে কি থাকা যাবে ?
অবশ্যই থাকতে পারবেন । সেটা অনেক আনন্দের / উপভোগ্য হবে । তাহলে কোন দেরী নয় ? কমপ্লেক্স থেকে সোজা সরাসরি চলে যান দ্বীপের পশ্চিমে একেবারেই নদীর কিনার ঘেঁষে । এক্ষেত্রে স্থানীয়দের সাহায্য নিতে পারেন । উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে তাবু করে নিন ।
রাতের মিটিমিটি আলো , খোলা আকাশের নিচে নদীর কলকল ধ্বনি ঘন কুয়াশায় কয়েকটি রাত পার করে দিতে পারবেন একেবারেই অনায়াসে । দ্বীপের বিখ্যাত ফার্মেসী অব কংগ্রেস নেই তাতে কি ? আপনার সাহায্য কবির কফি হাউজ তো এখনো আছেই । যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই কবির কফি হাউজের দেখা মিলবে । কফির পাশাপাশি সাহায্য পেয়ে যাবেন !!
দ্বীপের কোন জায়গায় ঘুরতে যাবেন ?
অবাক হওয়ার কিছুই নেই ! দ্বীপের প্রত্যেকটি জায়গা দেখার মতন । ফসল ভরা মাঠ সবুজ প্রকৃতি, হাট ,বাজার সব কিছু । দ্বীপের উত্তর থেকে দক্ষিনের সব প্রান্ত ঘুরে দেখতে পারেন অনায়াসে । দ্বীপের উত্তরে তাজমহলের আদলে নির্মিত শত বছরের পুরনো মরিয়ম বিবি সাহেবানী মসজিদ । মসজিদ সংলগ্ন বড় দিঘী , মাজার । দ্বীপের দক্ষিনের ঐতিহ্যবাহী শুকনা দিঘী । এছাড়া রয়েছে অসংখ্য মসজিদ ,স্কুল, মাদ্রাসা , বড় বড় খেলার মাঠ। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখেতে পারবেন পুরনো বাউল জারী সারি গানের আসর ।
কি কি খেতে পাওয়া যাবে ?
নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত খাবার আপনি পেয়ে যাবেন অতি সহজে । নিজেরা বাজার করে তৈরি করে নিতে পারেন । নদীর মাছ মাংস থেকে শুরু করে শীতের পিঠা সব কিছু পাবেন । আর এই মৌসুমের সবচেয়ে সুস্বাদু খেজুরের রসের সিন্নি । এছাড়া দ্বীপের বিখ্যাত মিষ্টি খেয়ে নিতে পারেন । সেটার জন্য আপনাকে দ্বীপের দক্ষিনে শিবের হাট পর্যন্ত যেতে হবে । রিক্সা টেক্সি বাইকে করে খুব সহজে যেতে পারবেন ।
সন্দ্বীপ ভ্রমণে কত টাকা খবচ পড়বে ?
হাজার তিনেক টাকার মধ্যে আপনি খুব ভালোভাবে ভ্রমণ করে আসতে পারবেন এই দ্বীপ থেকে । স্থানীয় কোন বন্ধু থাকলে তো আর কথা নেই । এই শীতের সময়টা হচ্ছে উপযুক্ত আপনার জন্য । সব কিছু ঘুরে দেখে আসার জন্য এই সময়ের কোন বিকল্প নেই ।
পিকনিক / সমুদ্র ভ্রমণ করা যাবে কি ?
পিকনিক স্পটের সমুদ্র ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই দ্বীপকে বেঁছে নিতে পারেন । এর বিকল্প মনে হয় না আর কোথাও আছে । অনেক তো কক্সবাজার , রাঙ্গামাটি বান্দরবন ঘুরে এসেছেন । এবার না হয় পিকনিক করতে চলে যান দ্বীপে । সমুদ্র ভ্রমণ হল পাশাপাশি পিকনিকের আনন্দ নিয়ে ফিরতে পারবেন । সুখবর হল দিনের মধ্যে এই দ্বীপে গিয়ে পিকনিক করে আবার ফিরতে পারবেন এই সময়ে । উচ্চবিলাসী সমুদ্র ভ্রমনের জন্য ষ্টীমার বা সিটাক ভাড়া নিতে পারেন সেক্ষেত্রে সদর ঘাট অথবা কুমিরা ঘাট এ যোগাযোগ করতে হবে । সম্ভবত বি আই ডব্লিউ টি সি এর অনুমতি নিতে হবে । (এ ক্ষেত্রে খরচ ও বেশ পড়বে)