যারা ইন্ডিয়াতে আসবেন বা আসতে চাচ্ছেন তারা নিশ্চয়ই ভিসা করতে কাগজ পত্র জমা দিবেন ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারে যেমন খুলনা, যশোর, ঢাকার গুলশান শাখা ইত্যাদি। যদি মেডিকেল ভিসা করতে দেন তাহলে আপনাকে ডলার ইন্ডোরসমেন্ট করা বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে ১৫০ ডলার মিনিমাম ইন্ডোরসমেন্ট করতে হয় ১ টা পাসপোর্ট এর জন্য। অনেকে বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে পাসপোর্ট আর ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখিয়ে ডলার হাতে হাতে নিয়ে নেন।
কিন্তু আপনি যদি ইন্ডিয়া ভ্রমণ করেন সেক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে State Bank of India তে গিয়ে এই কাজটি সহজেই করতে পারেন কোন ঝামেলা ছাড়া। এই ব্যাংক থেকে ডলার ইন্ডোরসমেন্ট করলে আপনাকে নগদ ডলার দিবে না বরং একটা ট্রাভেল কার্ড দিবে যা আপনার টাকা ওই কার্ডে ডলার হিসেবে লোড করা থাকবে। আর এই কার্ড ইন্ডিয়া ছাড়াও বিশ্বের ম্যাক্সিমাম দেশে ব্যবহার করতে পারবেন শুধু ইজরাইল ও পাকিস্তান বাদে।
এই কার্ড হয়তো আপনার কাছে ঝামেলা মনে হতে পারে কিন্তু এই কার্ড দিয়েই আপনি ইন্ডিয়ার ৯০% যায়গা ব্যবহার করতে পারবেন যেমন ডা: দেখাতে গেলে যে কোন হাসপাতাল যেমন CMS Hospital of vellore, Sangkara Nethralay of chennai, Apollo hospital of chennai, Nimhas hospital of Bangalore, TATA cancer Hospital of Mumbai এছাড়াও আরো অনেক ভালো, মাঝারি হাসপাতালে।
আবার আপনার শপিং করার ইচ্ছা হচ্ছে তাহলে ইন্ডিয়ার ম্যাক্সিমাম যায়গাতে এই কার্ড ব্যবহার করে আপনার বিল পরিশোধ করতে পারবেন। যেমন চেন্নাইয়ের পন্ডি বাজার শপিং এরিয়া, টি নগর শপিং এরিয়া, প্যারিস কর্নার শপিং এরিয়া, ভেলর সিটি ইত্যাদি।
আবার আপনি যদি কোন ওষুধ কিনতে চান সেখানেও ওষুধ এর বিল এই কার্ড দিয়েই পরিশোধ করতে পারবেন সেটা যদি ৪০০ টাকাও বিল হয় তাও পারবেন। এমনকি আপনি যদি Greams road এ থাকেন তাহলে ওই খানের কিছু লোকাল মেডিসিন দোকানেও বিল পরিশোধ করতে পারবেন। তাদেরকে বললেই হবে যে কার্ড দিয়ে পরিশোধ করতে চাচ্ছি তাহলে ওরা আপনার সামনে মেশিন এগিয়ে দিবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ৬০% মেডিসিন দোকান গুলোতে খুব ক্ষুদ্র আকারের মেশিন আছে যা শুধু কার্ড প্রবেশ করলেই আর আপনার মোবাইল নম্বর দিলে তা সাথে সাথে মোবাইলে মেসেস চলে আসে যে কত রুপি আপনার কার্ড থেকে কেটে নিল এমনকি আলাদা অনলাইন ভাউচারের লিংক ও চলে আসে মেসেস এর মাধ্যমে। আপনি মোবাইল থেকে মেসেসে প্রবেশ করে লিংকে ক্লিক করলেই ভাউচার দেখা যাবে।
এমনকি এই কার্ড দিয়ে আপনি ইন্ডিয়ার ভিসা লেখা আছে যে কোন বুথ থেকে প্রতিদিন ১০,০০০ রুপি পর্যন্ত উঠাতে পারবেন। আর স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার বুথ তো ম্যাক্সিমাম যায়গাতে আছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন একটা ট্রাভেল কার্ড কাছে থাকলে কত সুবিধা। টাকা পকেটে রাখারও কোন ঝামেলা নেই তবে মাছের বাজার, খাবার হোটেলে এই সুবিধা তেমন নেই তাই কিছু নগদ রুপি নিয়ে যাওয়া ভালো আর বুথ থেকে তো উঠাতে পারছেন, সো নো টেনশন।
একটা ট্রাভেল কার্ডে আপনি ৫০০০ ডলার পর্যন্ত লোড করে আনতে পারবেন যদি ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা মানে Saarc ভুক্ত দেশ হয়ে থাকে আর অন্য দেশ হলে ৭০০০ ডলার পর্যন্ত মানে প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা আর ইন্ডিয়াতে ৪ লাখ টাকার মতো।
#ট্রাভেল কার্ড করা কি সহজ?
জি, খুব ই সহজ। কোন ঝামেলা নেই। যে কোন ব্যাংকে গেলেই এই কার্ড করতে পারবেন তবে সরকারি ও দুই/একটা প্রাইভেট ব্যাংক বাদে। তবে আগামি বছর সমস্ত ব্যাংক এই কার্ড দেওয়া শুরু করবে আশা করি।
#কিভাবে ট্রাভেল কার্ড করবেন?
আপনি যদি ইন্ডিয়া ভ্রমণে করতে চান তাহলে State Bank of India থেকে করাই ভালো হবে। অনেকটা মনের প্রশান্তিও বলতে পারেন এই ছাড়া আর কিছুই না।
#কার্ড প্রসেসিং সিস্টেম:
প্রথমে আপনার পাসপোর্ট থাকতে হবে তবেই এই ট্রাভেল কার্ড করতে পারবেন ভিসা হওয়ার আগেই মানে ইন্ডিয়ান ভিসাতে এপ্লাই করার আগে। মাত্র ১৫ মিনিটস লাগবে এই কার্ড করতে।
১। আপনার পাসপোর্ট এর মেইন পেজ ১ কপি ফটোকপি মানে যে পেজে ছবি ও ঠিকানা দেওয়া আছে।
২। আপনার ন্যাশনাল আইডির ১ কপি ফটোকপি
৩। ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
৪। মুল পাসপোর্ট সাথে নিয়ে যেতে হবে।
৫। মিনিমাম ১৫০ ডলার সমমুল্যের টাকা যেমন ৮০ টাকা ধরে
তাহলে ১৫০*৮০ = ১২,০০০ টাকা + ১৩৫০ টাকা কার্ড ফি লাইফ টাইম = ১৩,০৫০ টাকা। তবে একটু বেশি নিয়ে যাবেন কারণ ডলার রেট ৮১/৮২ টাকাও হতে পারে।
আর কার্ড এর মেয়াদ ৫ বছর থাকবে। কার্ড ফি একবার ই দেওয়া লাগে কার্ড করার সময় কিন্তু এই কার্ড আপনি পাচ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি প্রতিবার ইন্ডিয়া/অন্য কোন দেশে যাওয়ার সময় স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া থেকে ডলার লোড করে নিয়ে যেতে পারবেন। সেজন্য ডলার লোড ফি বাবদ ২৫০ টাকা + ট্যাক্স বাবদ মোট = ৪৫০ টাকার মতো কেটে রাখবে এই ছাড়া আর কোন ফি নেই।
এই সমস্ত কাগজ খুলনা বা ঢাকা বা চিটাগাং স্টেটব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার শাখায় নিয়ে গেলেই আপনাকে ১৫ মিনিটের মধ্যে কার্ড করে দিবে। আপনি ব্যাংকে প্রবেশ করার পর জিজ্ঞেস করবেন যে ট্রাভেল কার্ড করবো। তাহলে বাকি কাজ ওরাই করে দিবে।
তারপর ও বলছি, ব্যাংকে গেলে আপনার কাছে সমস্ত পেপারস চাইবে। পেপারস গুলোর সব ফটোকপি দেওয়ার পর আপনাকে ৩/৪ মিনিটস অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আপনাকে ৩ পাতার একটা ফর্ম দিবে। এবার ওই ফর্ম এর ৩ জায়গায় সাক্ষর করবেন। এরপর কিছু সময় পর একটা প্রিন্ট করা স্লিপ দিবে। ওটা নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে টাকা জমা দিন। আর ৪/৫ মি অপেক্ষা করুণ, আপনার কার্ড ও পিন কোড দিয়ে দিবে ওদের খামে করে। ব্যাংক থেকে বের হওয়ার আগে চেক করে নিন কার্ড ও পিনের পেজ ঠিক আছে কিনা।