এইবার কোথায় ঘুরতে যাবেন, কিভাবে যাবেন, দেশে নাকি বিদেশে, তা ঠিক করতে আমরা নানা চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা করি। তবে ভ্রমণের সব থেকে গুরুত্বপূর্র্ণ বিষয় হলো ভ্রমণ প্রস্তুতি। কোথাও যাবার আগে একটি ভালো প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে আপনার ভ্রমণ কতটা আনন্দময় এবং সহজ হবে। ভ্রমণ পূর্ববর্তী প্রস্তুতির সাথে সাথে ভ্রমণের সময় কি কি বিষয় আগে থেকে জানা দরকার, তা নিয়েও আপনাকে ভাবতে হবে। আপনার পরবর্তী ভ্রমণকে আরও সুন্দর এবং আনন্দময় করতে আসুন জেনে নেই ভ্রমণ প্রস্তুতি নিয়ে কিছু টিপস এবং কৌশল।
কোথায় যাবেন ?
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে প্রথমেই যা নিয়ে ভাবতে হয় তা হলো, এই বার কোথায় যাবেন? কোথায় যাবেন, এই সিদ্ধান্ত নিতে হলে কিছু জিনিস আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। যেমন:- কতদিনের জন্যে যাবেন, সঙ্গে কাদের নিবেন, আপনার বাজেট কত, সাগর/পাহাড়/বন/নদী কোনটি আপনার বেশি পছন্দ, এখন কোন কাল, এই সময়ে কোন জায়গা সব থেকে ভালো, কোথায় আপনি এর আগে যান নাই, যেখানে যাবেন সেখানকার সুযোগ সুবিধা কেমন ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই আপনি পেয়ে যাবেন, আপনার আসলে কোথায় যাওয়া উচিত।
কখন যাবেন?
ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারী এই সময় ঘুরার জন্য সব থেকে ভালো সময়। তবে এই সময়ে যানবাহনের ভাড়া, প্লেন ফেয়ার, হোটেল ভাড়া অনেক বেড়ে যায়। তাই সম্ভব হলে নভেম্বর মাস কে বেছে নিতে পারেন। তখন না শীত, না গরম। আর মানুষের ভিড় কম থাকে। সাধারণত ছুটির দিনে হোটেল ভাড়া বেশি থাকে। তাই ছুটির দিন এড়িয়ে যাওয়া উত্তম।
কিভাবে যাবেন ?
ভ্রমণে পরিবহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি বাস, লঞ্চ, ট্রেন, প্লেন, প্রাইভেট কার, কোনটায় যাবেন, তা নির্বাচন করা খুবই জরুরি। আপনার বাজেট এবং সময়ের উপর নির্ভর করে নির্বাচন করবেন, আপনি কিভাবে যাবেন। যানজট এড়াতে স্থলপথ ব্যবহার না করাই উত্তম। এক্ষেত্রে ট্রেন একটি ভালো উপায়। আর আপনার সামর্থ থাকলে বেছে নিতে পারেন প্লেন। তবে যে পরিবহণই ব্যবহার করেন না কেন, আপনার জীবনের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার ব্যাপারটা সব সময় মাথা রাখবেন। আর টিকেট ২-৩ মাস আগে কাটার চেষ্টা করবেন। তাহলে কমে পাবেন।
কোথায় থাকবেন ?
কোথায় থাকবেন তার ওপর আপনার ভ্রমণের আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি নির্ভর করে। কোথায় থাকবেন তার সিদ্ধান্ত বাজেট, কেমন পরিবেশে থাকতে চান, ভ্রমণ সঙ্গী কতজন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন এই বিষয়গুলো চিন্তা করে নিতে হবে। তবে থাকার জায়গা সেখানে যাবার আগে থেকেই ঠিক করে গেলে ভালো হয়। এখন অনলাইনে আগে থেকেই হোটেল বুকিং দেয়া যায়। তা সম্ভব না হলে অন্তত খোঁজ খবর নিয়ে, দরদাম করে হোটেল ঠিক করবেন। সাধারণত ছুটির দিনে হোটেল ভাড়া বেশি থাকে। তাই ছুটির দিন এড়িয়ে যাওয়া ভাল।
ট্যুর প্ল্যান
ভ্রমনে সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সময়কে সঠিক ভাবে কাজে লাগালে, কম সময় অনেক কিছু কভার করা যায়। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে কি কি দেখার আছে, কখন কোথায় যাবেন, কোন স্থান কখন খুলে, কখন বন্ধ হয়, টিকেট কত ইত্যাদির সব কিছুর একটা খসড়া আগে থেকেই তৈরী করে স্মার্ট ফোন বা ডাইরিতে লিখে নিবেন।
ব্যাগ গুছানো
কোথায় যাচ্ছেন, কতদিন থাকবেন তার ওপর নির্ভর করে ব্যাগ গুছাবেন। যেমন: শীত প্রধান এলাকায় গেলে অবশ্যই শীতের কাপড়, সমুদ্র পারে গেলে হালকা কাপড়, পানিতে নামলে শর্ট প্যান্ট ইত্যাদি সাথে নিতে হবে। তবে অযথা ব্যাগ ভর্তি কাপড় না নিয়ে দরকারি জিনিস নেয়াই উত্তম। কেনান চূড়ান্ত সময়ে এই ব্যাগ কিন্তু আপনাকেই বহন করতে হবে। তাছাড়া প্লেনে গেলে ব্যাগের ওজন একটা ভাইটাল ব্যাপার। পাহাড়ে গেলে অবশ্যই কাঁধ ব্যাগ নিবেন। জামাকাপড়ের বাহিরে টুথপেষ্ট, ব্রাশ, গামছা বা তোয়ালে, ক্যাপ, জুতো, বেল্ট, সানগ্লাস, কসমেটিকস ইত্যাদি যা যা লাগে তার লিস্ট করে ব্যাগে ঢুকাবেন। ইউটিউবে প্যাক করার অনেক ভিডিও রয়েছে। সময় হলে দেখে নিতে পারেন। শপিং করার ইচ্ছা থাকলে কম জিনিস নিয়ে যাওয়ায় ভালো।
দরকারি ডিভাইস
বেড়াতে যাবার আগে আপনার দরকারি ডিভাইস যেমন: মোবাইল, চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক, ক্যামেরা, ড্রোন, বাইনোকুলার ইত্যাদি ব্যাগে নিয়েছেন কিনা দেখে নিন। তাদের ব্যাটারি ফুল চার্জ আছে কিনা নিশ্চিত করুন। সম্ভব হলে একটি মাল্টি প্লাগ, থ্রি পিন প্লাগ ও কনভার্টার সাথে নিতে পারেন।
প্রয়োজনীয় ওষুধ
শারীরিক কোনো সমস্যা থাকলে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে সাথে নিন। এছাড়া প্যারাসিটামল, গ্যাসের ঔষধ, ওরাল সেলাইন, পরিমাণমতো তুলো ও গজ, সানপ্রোটেক্ট লোশন ও ক্রিম, মশার ক্রিম ইত্যাদি সাথে নিন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বেড়াতে যাবার আগে ২-৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি, পাসপোর্ট-ভিসা(বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে), যেখানে যাচ্ছেন তার অনুমতিপত্র(যদি লাগে), ড্রাইভিং লাইসেন্স, NOC ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সাথে নিয়েছেন কিনা নিশ্চিত করুন। অনেক হোটেল আইডি কার্ডের কপি ছাড়া রুম ভাড়া দেয় না।
টাকা পয়সা
ভ্রমণে কত টাকা লাগবে তা আগে থেকেই ফাইনাল করে ফেলুন। দরকার হলে অনলাইন ব্লগ, ফেইসবুক গ্রূপের সাহায্য নিতে পারেন। কোন দিন, কোথায় কত টাকা খরচ করবেন তার খসড়া করে নিন এবং সে অনুসারে খরচ করা চেষ্টা করবেন। ধারণা থেকে অতিরিক্ত কিছু টাকা সাথে নিলে ভাল হয়। বিদেশে গেলে প্রয়োজনীয় ডলার পাসপোর্টে এন্ড্রোস করিয়ে নিন এবং সাথে নিন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড থাকলে সব থেকে ভালো হয়। ইন্ডিয়ায় গেলে দেশ থেকেই রুপি কনভার্ট করে নিতে পারেন। অথবা সেখানে গিয়েও কনভার্ট করতে পারেন। তবে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন।
খাওয়া দাওয়া
ভ্রমণের সময় সাথে কিছু শুকনো খাবার নিতে পারেন। লোকাল কোন ঐতিহ্যবাহী খাবার থাকলে তা খেয়ে দেখতে পারেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোড়কজাত খাবার কেনার সময় এক্সপায়ার ডেট দেখে নিন। পরিচিত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে খাবার খেতে চেষ্টা করুন। খাবার স্বাস্থ্যসম্মত কি না তা যাচাই করুন। হজম করতে পারবেন না এমন খাবার না খাওয়াই উত্তম। পেট ভর্তি করে না খেয়ে অল্প অল্প করে খান।
আশা করি আমার এই ভ্রমণ প্রস্তুতি আপনার ভ্রমণকে আরো সুন্দর এবং আনন্দময় করে তুলবে। আপনার ভ্রমণ শুভ হউক।