যখন আমরা কোথাও ভ্রমণে যাই, আমরা চাই সবকিছুই যেন নির্ভুল ও ঝুট-ঝামেলাহীন থাকে। আমরা আমাদের সময়, টাকা এবং শক্তিরও অপচয় করতে চাই না। তাই ভ্রমণে যাওয়ার পূর্বে কিছু উপকারী উপদেশ মেনে চললে ভ্রমণ পুরোটাই উপভোগ্য হয়। চলুন জেনে নেই তেমনি কিছু সাধারণ ও উপকারী উপদেশ যা আপনার ভ্রমণকে করবে সহজ এবং আনন্দময়।
১) মশা থেকে রক্ষা পেতে ভুঁই তুলসি পাতা:শুকনো তুলসি পাতা।
এই উপদেশ তাদের জন্য যারা হাইকিং পছন্দ করেন। আপনার যা করতে হবে তা হলো, আগুন জ্বালিয়ে তুলসি পাতার এক গোছা ছুঁড়ে মারুন সেই আগুনে। ব্যস, মশা অনেক লম্বা সময়ের জন্য আপনার কথা ভুলেই যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পাতা পোড়া গন্ধটি থাকবে ততক্ষণ আর কোনো চিন্তা নেই।
২) কন্টাক্ট লেন্সের পাত্রে ক্রিম সংরক্ষণ:লেন্সের খালি কৌটো।
আপনি যদি কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার নাও করে থাকেন, ভ্রমণে যাওয়ার পুর্বে যেকোনো ফার্মেসি থেকে খুব কম দামে কিনে নিতে পারেন ছোট্ট একটি পাত্র। যদিও লেন্সের পাত্রে জায়গা খুব কম থাকে কিন্তু এটি আপনাকে বেশ কয়েকদিনের জন্য ক্রিম সংরক্ষণ করে ব্যবহারের সুবিধাটি দিবে। ক্রিম কোনোভাবে পড়ে যাওয়ার কোনো চিন্তা থাকবে না, বরং এটি বহন করা আরও সহজ হবে। আপনি চাইলে এতে টুথপেস্টও নিতে পারেন।
৩) মোশন সিকনেস বা ভ্রমণ গতিতে অসুস্থতা বোধে তেজপাতার ভূমিকা: তেজপাতা।
প্লেন, ট্রেন বা গাড়ি- যেকোনো যাত্রা গতিতে অসুস্থতা বোধ করলে একটি তেজপাতাই যথেষ্ট আপনার সমস্যার সমাধান দিতে।আপনাকে যা করতে হবে তা হলো জিহ্বার নিচে তেজপাতা রেখে দিন, এটির স্বাদ নিয়ে কোনো চিন্তা না করে। কারণ এটি আসলেই ভালো স্বাদের এবং চুইংগামের মতই কাজ করবে।
৪) ওষুধের পাত্রে জুয়েলারি:ঔষুধ বাক্স।
কোথাও যেতে ওষুধের পাত্র বা পিলবক্স জুয়েলারি সংরক্ষণের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়। কারণ এটি আপনার গলার হার, কানের দুল, হাতের রিং সুন্দরভাবে রাখার জন্য সবচেয়ে কম জায়গা নেবে কিন্তু সর্বোচ্চ সুবিধা দেবে।
৫) ববি পিনের জন্য টিকট্যাক বক্স:ববিপিন বক্স।
যখন ভ্রমণে বের হচ্ছেন সাথে একটি টিকট্যাক বক্স নিয়ে নিতে পারেন ববি পিন এবং চুলের ক্লিপ রাখার জন্য।
৬) কীভাবে স্যুটকেসে রাখা জামাকাপড় কুঁচকানো থেকে রক্ষা করতে পারেন:জামা ভাঁজ রাখবেন যেভাবে।
জামাকাপড় যেন কুঁচকে না যায় এজন্য আপনি স্যুটকেসে জামা ভাঁজ করে না নিয়ে রোল করে নিতে পারেন। এতে করে আপনার জামার ইস্ত্রি নষ্ট হবে না বা কুঁচকে যাবে না। আর আপনি যদি চান জামার রোলটি একদম ঠিকভাবেই থাকুক তবে আপনি রাবার ব্যান্ড লাগিয়ে রোলগুলো ঠিক রাখতে পারবেন।
৭) ঘরের অতিরিক্ত চাবিটি লুকিয়ে রাখুন কেয়ারি বা মাটির ফুলদানির নিচে:মাটির নিচে চাবি লুকানোর পদ্ধতি
এই পন্থাটি কোথাও যাওয়ার পূর্বে ঘরের চাবিটি সম্পূর্ণ নিরাপদ জায়গায় লুকিয়ে রাখার জন্য খুব কার্যকরী। ঘরের চাবিটি পাপোষ অথবা দরজার উপরের স্থানে না রেখে একটি ছোট প্লাস্টিকের বাক্সে ভরে ঘরের কাছেই কেয়ারি বা গাছ লাগানোর পাত্রে মাটি খুঁড়ে সেই গর্তে বাক্সটি রেখে দিতে পারেন। এবং বাক্সটির ঢাকনার উপর রাখুন একটি পাথর। এখন যে কেউ ভেবে নিবে এখানে শুধু মাত্র একটি পাথর পড়ে আছে।
৮) সিবি রেডিও:সিবি রেডিও।
যদি আপনি বেশিরভাগ সময় গাড়িতে ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে আপনি কিনে নিতে পারেন একটি বিশেষ ধরণের রেডিও, যার মাধ্যমে আপনি যোগাযোগ করতে পারবেন মোটরলরির চালকদের সাথে। তারা আপনার যেকোনো সমস্যায় সাহায্য করতে পারবে এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। এছাড়াও আপনি ট্রাফিক, রাস্তার গর্ত এবং রাস্তার পাশে খাবারের দোকান সম্পর্কে জরুরি সব তথ্যও জেনে নিতে পারবেন।
৯) সঙ্গে নিয়ে যাওয়া খাবার পরিষ্কারভাবে বহন করার একটি ছোট্ট উপায়:ফয়েল পেপারে খাবার।
যে পাত্রে আপনি খাবার বহন করবেন তা ফয়েল পেপার দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে খুব সহজেই খাবার পরিষ্কারভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন। এর ফলে আপনার খবারটিও গরম থাকবে অনেকক্ষণ।
১০) শুকনো খাবার হিসেবে সহজেই বানিয়ে নিন পপকর্ন:ফয়েল পেপারে পপকর্ন।
ভ্রমণে শুকনো খাবার হিসেবে খুব সহজে বানিয়ে নিতে পারেন ভুট্টার খই ভাজা। একটি ফয়েল পাত্র নিন এবং চার ভাগের এক ভাগ ভুট্টার সাথে একটু ভেজিটেবল তেল মিশিয়ে নিন। তারপর পাত্রটিকে এমন ভাবে ফয়েল পেপার দিয়ে মুড়িয়ে নিন যেন তা গোল গম্বুজের মত হয়।আগুনের আঁচে আট মিনিটের মতো সময় নিয়ে ভুট্টা ভেজে নিন যতক্ষণ না ভুট্টা শস্য ফুটে ওঠে। ব্যস! হয়ে গেল মজাদার ভুট্টা ভাঁজা বা পপকর্ন!
১১) জুতো জোড়া পরিষ্কার রাখুন:প্যারাফিন ওয়াক্স।
সাধের জুতো জোড়া বিভিন্ন চটচটে ময়লা বা এ ধরনের অন্যান্য জিনিস থেকে বাঁচাতে ভ্রমণে বের হওয়ার পূর্বে প্যারাফিন ওয়াক্স দিয়ে মুছে নিন।
১২) আগুন জ্বালাতে চিপস:আগুন জ্বালাতে চিপস
আগুন জ্বালানোর জন্য চিপস হতে পারে একটি দারুণ উপকারী জিনিস। চিপস দিয়ে আগুন ধরিয়ে কিছু শুকনো ডালের মাঝে রেখে দিলেই হয়ে যাবে ক্যাম্প ফায়ার।
১৩) ট্রাক গাড়ী অনুসরণ:ট্রাক
রাস্তার কোথাও যদি গাড়ি থামিয়ে জলখাবার খাওয়ার চিন্তা করে থাকেন তবে এমন একটি জায়গা নির্বাচন করুন যেখানে অনেক ট্রাক পার্ক করা থাকে। সাধারণত ট্রাক চালকেরা এক জায়গাতেই খাওয়া দাওয়া করে থাকে তাই আপনিও তাদের অভিজ্ঞতার উপর ভরসা করতে পারেন।
১৪) অপরিচিত ব্যক্তির সাথে সেলফি:সেলফি
আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন হিচ হাইক করার, অর্থাৎ বিনা ভাড়ায় কারও সফরসঙ্গী হওয়ার তবে নিজেকে বিপদ থেকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা রাখুন। যদি আপনি কোনো অপরিচিত ব্যক্তির গাড়িতে লিফট নিয়ে থাকেন তবে তার সাথে কথা বলুন, তার সম্পর্কে জানতে চান বা তার সাথে ফ্রি হয়ে নিন। আর তারপর আপনি তার সাথে ছবি তুলুন এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করতে পারেন নিজের সুরক্ষার জন্য।
১৫) ওকে ম্যাপ্স:ওকে ম্যপ্স
ওকে ম্যাপ্স গুগোল ম্যাপ্স থেকে ছবি সেভ রাখে। আর আপনি অফলাইন থেকেও এটি ব্যবহার করতে পারবেন। সার্চ বারে গিয়ে শুধু ওকে ম্যাপ্সে ক্লিক করুন আর বাকি কাজ গুগোলই করতে থাকবে।
১৬)জ্যাকেটের হুডেই জ্যাকেট প্যাক:জ্যাকেট
জ্যাকেট বহনে এটা আসলেই খুব সুবিধাজনক পন্থা। এই ভাঁজে রোল করে জ্যাকেট প্যাক করলে তা ব্যাগে জায়গা কম নেবে এবং দরকারের সময়ে আপনাকে বালিশের সেবাও দেবে।
১৭) শরীরের কোথাও চুলকাচ্ছে? ব্যবহার করুন ডিওডরেন্ট:ডিওডরেন্ট
মশার কামড়ে আপনার শরীরের কোথাও যদি চুলকানির সমস্যা হয় তাহলে একটু ডিওডরেন্ট সেই জায়গায় ব্যবহার করুন।
১৮) জামা-কাপড়ের ব্যাগটির যত্ন:
যদি আপনি চান ভ্রমণ করার সময় আপনার জামা কাপড়ের ব্যাগ বা স্যুটকেসটি দুর্গন্ধমুক্ত এবং পরিষ্কার থাকুক তাহলে স্যুটকেসের জামাকাপড়ের নিচে এবং পাশে এন্টিস্ট্যাক্টিক ওয়াইপ্স রাখুন।
১৯) প্লেন জার্নিতে ভিন্ন ভিন্ন ভারি খাবার:
বেশিরভাগ এয়ারলাইন্সই তাদের যাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের খাবারের সু-ব্যবস্থা করে থাকে। এর মধ্যে আপনি বেছে নিতে পারেন নিরামিষ, হালাল, চর্বিমুক্ত খাবার। যেহেতু আপনাকে এর জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে না, তো কেন আপনি নতুন কিছু উপভোগ করবেন না?
২০) ফ্র্যাজাইল স্টিকার:
এয়ারপোর্টে এই স্টিকার লাগানো ল্যাগেজ খুব সতর্কভাবে পরিবহন করা হয় এবং তারা এই স্টিকারের মালামাল দ্রুত খালাস করে থাকে। আপনি অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে এই স্টিকার চেয়ে লাগিয়ে নিতে পারেন আপনার ব্যাগে। এবং তারপর ব্যাগ নিয়ে আর চিন্তার কিছুই থাকবে না।