শ্রীলঙ্কাকে বলা হয় ল্যান্ড অফ সেরেন্ডিপিটি। এই দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত হওয়ায় আমাদের পক্ষে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া খুব বেশি ব্যায়সাপেক্ষ আর ঝামেলার না। ব্যাক্তিগত উদ্যোগেও চলে যেতে পারেন সনাতন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই দেশে।
ঘুরে বেড়ানোর জন্য উল্লেখযোগ্য শহর কলোম্বো : শ্রীলঙ্কায় সনাতন ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল পেতে চাইলে কলম্বো ঘুরে দেখার কোনো বিকল্প নেই। এখানে যেমন আছে ঐতিহ্যগত নিস্তদ্ধতা তেমনি আধুনিক উজ্জ্বলতাও। এখানে দেখার মতো রয়েছে, কলম্বোর অন্যতম বুদ্ধমন্দির কেলানিয়া রাজা মহাবিহার। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসেই এখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পেরাহেরা অনুষ্ঠিত হয়।
গল ফেস গ্রিন বীচও কলম্বোর অন্যতম উল্লেখযোগ্য সৌন্দর্যের একটি। যেখানে সুনীল সমুদ্র আর সমুদ্রের ঢেউ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা।
এখন যদিও কমাশিয়াল সেন্টারে পরিনত হয়ে গেছে এলাকাটা তাও পর্তুগীজ এবং ডাচ পিরিয়ডের ফোর্টের আবেদন এতটুকু কমেনি। এই এলাকার অসংখ্য দর্শনীয় স্থান একটু কষ্ট করে পায়ে হেঁটেই দেখে নেয়া সম্ভব। কলম্বো থেকে ১২ কিমি দূরে অবস্থিত বীচের নাম মাউন্ট লাভিনিয়া। ১৮০৫ সালে তৈরি গর্ভনর হাউজ এখানে অবস্থিত। যা এখন মাউন্ট লাভিনিয়া হোটেলে পরিনত হয়েছে।
এলিফেন্ট শো এর জন্য বিখ্যাত এক চিড়িয়াখানার নাম দেহিওয়ালা জু। ১১ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় দূর্লভ প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে।
অনুরাধাপুর :
শ্রীলঙ্কার অন্যতম প্রাচীন শহরের নাম অনুরাধাপুর। কলম্বো থেকে ২০৬ কিমি দূরে অবস্থিত এই এলাকাটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। এখানে দেখতে পাবেন ১৩ মিটার উচু পাথরের তৈরি বুদ্ধের ষ্ট্যাচু- আওকনা বুদ্ধ। রাজা দাথুসেনের শাসনকালে নির্মিত হয়েছে এটি। পাবেন তৃতীয় শতাব্দিতে নির্মিত ইসরুমিনিয়া মন্দির। এই মন্দির বিখ্যাত রক কার্ভিংসের জন্য। এখানে কোনোভাবেই মিস করা যাবেনা রাজা দুতুগামানুর ছেলে সালিয়া এবং তার প্রেমিকার কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত খোদাইচিত্র লাভারস নামের কার্ভিং। অসাধারণ খোদাই চিত্র এটি। অনুরাধাপুরের আরো বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে এর মনাষ্ট্রি এবং স্তুপগুলো। অভয়গিরি এখানকার সবচেয় বড় মনাষ্ট্রি কমপ্লেক্স। এছাড়াও এখানে দেখার আছে, মিহিনতালের মন্দির, জেথাওয়ানের মনাষ্ট্রি, ওয়ানভেনির সেয়া।
ক্যান্ডি :
ক্যান্ডিকে শ্রীলঙ্কার সাংস্কৃতিক রাজধানি বলা হয়। কলম্বো থেকে ১১৫ কিমি দুরে অবস্থিত এই শহর। আডামস পিক, দ্যা টেম্পল অফ টুথ, দ্যা ওল্ড ওয়েল প্যালেস কম্পাউন্ড, লঙ্কাতিলকা মন্দির, এম্বেকা মন্দির ক্যান্ডির উল্লেখযোগ্য ঘুরে বেড়াবার স্থান।
থাকার জায়গা :
স্বল্পদামের হোটেল থেকে শুরু করে বিশাল বাজেটের হোটেল সবই পাবেন শ্রীলঙ্কায়। কলম্বোর গল ফেস হোটেল, পাম ভিলেজ হোটেল বা তাজ হোটেলে থাকতে পারবেন। এছাড়া হোম স্টেও করা যায় স্থানীয় লোকদের বাড়িতে।
কেনাকাটা শ্রীলঙ্কায় কেনাকাটা করতে পারেন পেটাহ-তে। এছাড়া ক্র্যাফটের জন্য লকশলা নামের এম্পেরিয়ামে যেতে পারেন। সেখানে দাম তুলনামূলক বেশি হলেও তার মান উন্নত। এগুলো ছাড়াও শ্রীলঙ্কায় প্রচুর শপিং মল ও মার্কেট রয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গেলে যে সামুদ্রিক খাবারগুলো অবশ্যই খাবেন সামুদ্রিক খাবার খেতে ভালোবাসেন? সত্যিই খুব কম খাবারই রয়েছে যেগুলো শরীর আর মনকে একই সাথে পুরোপুরি ভিন্ন একটা আবেশ দেয়। বিশেষ করে নিত্যনৈমিত্তিক খাবারের পাশাপাশি খানিকটা সামুদ্রিক খাবার নিয়ে আসতে পারে আপনার আটপৌরে জিভের স্বাদে অনেকটাই নতুনত্ব।
সমুদ্র যেমন শ্রীলঙ্কাকে ঘিরে রেখেছে এখানকার মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মকে, তেমনি দখল করে নিয়েছে তাদের খাওয়া-দাওয়ার অনেকটা অংশও। শ্রীলঙ্কা এমনিতে বাংলাদেশ থেকে খুব একটা দূরে নয়। প্রতিবেশীই বলা চলে অনেকটা। তবুও বাংলাদেশ থেকে অনেকটাই আলাদা তাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। আর এ ভিন্নতার প্রধান কারণ হচ্ছে এখানকার অসীম সমুদ্র। যেটি কিনা ভিন্নতা তৈরি করে দিয়েছে এ দেশের মানুষের খাবারেও। প্রতিদিন খাবার হিসেবে খেতে পারেন শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী খাবার ভাত ও কারি। রয়েছে মাংসে রান্না করা ভাত যা পরিচিত বুরিয়ানি নামে। খেতে পারেন কোড়ানো নাড়কেল, অন্যান্য মশলা আর চিংড়ি সহযোগে রান্না করা মালুঙ্গ, এবং পেয়াজ এবং মল ডিভিয়ান মাছের সহযোগে রান্না করা সিনি সাম্বল।
এছাড়া আরো যা খেয়ে দেখবেন তা হলো :
১. ফিশ আমউল থাইয়াল মাছের টক তরকারী নামে পরিচিত এই শ্রীলঙ্কান খাবারটি তৈরি হয় সামুদ্রিক মাছ দিয়ে। এক্ষেত্রে টুনা মাছটিই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মাছকে প্রথমে চেপে ভর্তা করে নিয়ে পরে মশলা মিশিয়ে নিতে হয় প্রথমটায় এ খাবার তৈরিতে। এরপর তাতে টক স্বাদের জন্যে যোগ করা হয় কিছু ফলের রস।
২. জাফনা ক্র্যাব কারি সামুদ্রিক খাবারের পাশাপাশি নারকেলের জন্যেও বিখ্যাত শ্রীলঙ্কা। আর এই খাবারটি তৈরিতে সামুদ্রিক কাঁকড়ার সাথে নারকেল বাটাও মেশানো হয় এখানে। এছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মশলা তো রয়েছেই। পৃথিবীর সবচাইতে সুস্বাদু কাঁকড়া রান্না খাওয়ার সুযোগ না হারাতে চাইলে একবার অবশ্যই আপনার স্বাদ নেওয়া উচিত জাফনা ক্র্যাব কারির।
৩.স্কুইড কারি খাবারের ক্ষেত্রে স্কুইড অনেকে বেশি রান্না করে ফেলেন। অনেকে কম। অনেকে ঠিক করে এটি তৈরিই করতে পারেননা। ফলে নিজের সবটুকু স্বাদ প্রকাশ করতে পারেনা সমুদ্রের এই মাছটি। তবে শ্রীলঙ্কায় গেলে অবশ্যই আপনার কাজ হবে স্কুইডের তরকারী খেয়ে আসা। সামুদ্রিক এই প্রাণীটিকে অসাধারণ উপায়ে ও প্রণালীতে রান্না করতে পারে শ্রীলঙ্কানরা যেটা নিমিষেই আপনার জিভে এনে দেবে জল।