ভারতের মেঘালয় রাজ্যেরা রাজধানী শিলং বেশ জনপ্রিয় একটি পর্যটন শহর। প্রায় ৬,০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত শিলং শহর এবং তার আশেপাশে দেখার জন্য অনেক সুন্দর জায়গা আছে। বিশেষত যারা পুরো পরিবার নিয়ে স্বল্প খরচে দেশের বাইরে ঘুরতে যান তারা শিলংকে বেছে নিতে পারেন। বাংলাদেশের সিলেট জেলার সাথেই মেঘালয়ের অবস্থান। পৃথিবীর ২য় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় চেরাপুঞ্জিতে, যা মেঘালয় রাজ্যের অন্তর্গত। যারা মেঘ, পাহাড়-পর্বত এবং ঝরণা ভালোবাসেন তাদের জন্য মেঘালয় আদর্শ গন্তব্য।
কিভাবে যাবেন:
বিআরটিসির-শ্যামলী বাস: ঢাকা থেকে বিআরটিসি শ্যামলীর গাড়ী ছাড়ে প্রতি বৃহস্পতি বার রাতে এবং ফিরে আসে সোমবার রাত ১০টায়। শিলং যাবার জন্য এটাই শিলং যাবার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। গাড়ী ভাড়া ৪,০০০ টাকা (রিটার্ন)। এছাড়াও ভিসা ফি ৬০০ টাকা+সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা। বর্তমানে চার্জ মোট ৫,৬০০ টাকা শ্যামলীতে জমা দিয়ে ভারতের ১-৬ মাসের ভিসা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে ইটোকেন নিতে হবেনা। তবে ৫ কর্মদিবস সময় লাগবে ভিসা পেতে। এছাড়া আপনার যদি ভিসা নেয়া থাকে ডাউকি হয়ে, আপনি শুধু বাসের টিকেট কেটেই যেতে পারেন। মনে রাখবেন ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা দিতে হবে, সেটা রওনা দেয়ার আগে সোনালী ব্যাংক থেকে দিয়ে যাওয়াই ভালো।
যোগাযোগ:
০১৭৪৯৯৩৭৫৪৫ (শ্যামলী কমলাপুর আন্তর্জাতিক টার্মিনাল)
বিকল্প পদ্ধতি: আপনি যদি শ্যামলীর রুটে স্বাচ্ছন্দ বোধ না করেন, অথবা আপনার সাথে সময় না মিলে তাহলে নিজে নিজে ভিন্নভাবে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে সিলেট রাতের বাসে চলে যান (ভাড়া নন-এসি ৪৭০ টাকা এসি ১২০০ টাকা) সকালে সিলেট নেমে সিএনজি বা গাড়ী ভাড়া করে চলে যান তামাবিল। বর্ডার পার হয়ে শিলংয়ের জন্য গাড়ী ভাড়া করুন। বড় ট্যাক্সিতে ৩,০০০ থেকে ৩,২০০ রুপি নিতে পারে। এছাড়া ছোট ট্যাক্সিক্যাবও নিতে পারেন যদি সংখ্যায় কম হন।
ভিসা: ভারতের ভিসার সব ডকুমেন্টই (ন্যাশনাল আইডি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট/ডলার এনডোর্স/ক্রেডিট কার্ডের ফটোকপি, লেটার অব ইন্ট্রুডাকশন, ইত্যাদী) লাগবে। আর পোর্ট অব এন্ট্রি এক্সিট ডাউকি সিলেক্ট করুন। বিস্তারিত www.ivacbd.comদেখুন।
কখন যাবেন:
মেঘালয় সারা বছরই যেতে পারেন। তবে পূজার সময়টা এড়িয়ে যেতে পারেন। সেসময় খুব বেশী ভিড় থাকে। আর বর্ষার সময় যাবার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুুতি নিয়ে যান যেমন রেইন কোট, ছাতা ইত্যাদী সংগে নেয়া । কারণ চেরাপুঞ্চিতে অনেক বেশী বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়াও ছোট-বাচ্চা থাকলে ডিসেম্বর-জানুয়ারী সময়টা এড়িয়ে যেতে পারেন। কারণ তখন তাপমাত্রা ৩-১০ ডিগ্রী থাকে, তবে বরফ পড়েনা।
কোথায় থাকবেনঃ
মেঘালয়ের পুলিশ বাজারের আসে পাশে অনেকগুলো হোটেল আছে। ভাড়া ৫০০-২০০০ রুপি। খোজাখুজি করে উঠে পড়ুন। কিছু হোটেলের নাম ও ফোন নাম্বার দিলাম (ভিসার ফরম পূরণ করার সময় কাজে লাগবে):
Hotel Blue Mount Nx1
MawdiangdiangNear NEIGRIHMS Hospital
Shillong - 793018
Contact No. +918259062502 | +919856689450
Hotel Eden Residency,Police bazar
Sameer 8794802541
2505360,2505358,9206100701
কোথায় খাবেনঃ
পুলিশ বাজারের আশে পাশে অনেক গুলো খাবার হোটেল আছে। সেখানে ভাত-মাছ খেতে পারেন। জনপ্রতি ১০০-১৫০ রুপি খরচ হবে। এছাড়া সাবওয়ে সহ আরো কয়েকটি চেইন আছে যেগুলোতে ২০০-৩০০ রুপিতে খেতে পাবেন।
আশেপাশের দর্শনিয় স্থানঃ
শুক্রবার দুপুর থেকে রাত থেকে রবিবার রাত (শ্যামলীর শিডিউলের সাথে মিল রেখে তৈরী করার চেষ্টা করলাম):শুক্রবার: শিলং পৈাছতে যদি দুপুর গড়িয়ে যায় সেদিন আর কোথাও না যেয়ে বিকাল বেলাটা শিলং শহরে ঘোরাঘুরি করে কাটাতে পারেন। বিকেলে উমিয়াম লেকটাও ঘুরে আসতে পারেন। অথবা ডন ভসকো মিউজিয়াম, ওয়ার্ড লেক দেখে সময় কাটান। সন্ধ্যাটা রাখুন কেনা কাটার জন্য।
শনিবার: চেরাপুঞ্জি বা সোহরা হচ্ছে শিলংয়ের মূল আকর্ষণ। যদি সংখ্যায় বেশী থাকেন নিজেরা একটা গাড়ী ভাড়া করে চলে যেতে পারেন। আর না হলে মেঘালয়ের ট্যুরিজমের বাসে করে যান। অনেকগুলা স্পটই একদিনে কভার করা যাবে। যেমন, সেভেন সিস্টারস ফলস, মাউসামি কেইভ, নুকায়কালী ফলস, মাউন্টেইন ভিউ ইত্যাদী। বড় ট্যাক্সি (টাকা সুমো, ৭/৮ জন উঠতে পারবেন) ভাড়া নিতে পারে ৩,০০০ থেকে ৩,২০০ রুপি। ছোট ট্যাক্সি যেটাতে ৩/৪ জন উঠতে সেগুলোর ভাড়া আরও কম হবে।
রবিবার: যে গুলো বাদ পড়েছে যেমন: এলিফ্যান্ট ফলস এব শিলং পিক ঘুরে আসুন। দুটোই শহরের কাছাকাছি। ট্যাক্সি ভাড়া নিতে পারে ৩০০ রপি করে। লিভিং রুটের কথা ভুলে যেতে পারেন, ওটা একেবারে ডাউকির কাছে।সোমবারদিন ফিরে আসবেন। ৩ রাত ৩ দিনের জন্য মোটামুটি জনপ্রতি ১২,০০০ টাকা (১৫০ ডলার) যথেষ্ঠ । এর মধ্যে বাস ভাড়া+ভিসার ৫,০০০ টাকা বাদ দিলে থাকে ৭,০০০ টাকা।
শিলং থেকে অন্যান্য শহর:
আপনার হাতে যদি সময় থাকে তবে অন্যান্য শহরও ঘুরে আসতে পারেন। যেমন গুয়াহাটি, আসামের রাজধানী। শপিংয়ের ইচ্ছা থাকলে শিলং থেকে গুয়াহাটি ঘুরে আসতে পারেন, যেতে ৩ ঘন্টা লাগবে। ভাড়া শেয়ার গাড়ীতে ভাড়া ১৫০-২০০ রুপির মত। ভারতের অন্য কোন প্রদেশে যেতে হলেও আপনাকে গুয়াহাটি যেয়ে ট্রেন ধরতে হবে।
টিপসঃ
১. শিলংয়ে ডলার ভাংগানো খুব সমস্যা। ব্যাংকিং আওয়ারের মধ্যে আসতে পারলে ব্যাংক থেকে ভাংগান আর না পারলে শ্যামলীর সুপারভাইজারকে বলুন সাহয্য করতে। তাও সম্ভব না হলে পুলিশ বাজারের কাছে একটা কাপড়ের দোকান আছে সেখানে ভাংগাতে পারবেন কিন্তু ঠকাবে
২. মেঘালয় আসামী ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে দূরে থাকবেন, এরা আপনার সাথে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা করতে পারে। গারো/খাসিয়া ট্যাক্সী ড্রাইভার নিবেন।
৩. সন্ধ্যার সাথে সাথে মোটামুটি লোক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবুও মুভি দেখেতে যেতে পারেন। যদিও সিনেমা হলটা খুব ভালো কিছু না।
৪. খাবার সময় মনে রাখবেন রুই মাছ সবচেয়ে সস্তা এবং ইলিশ মাছ সবচেয়ে দামী, ভুলেও বাংলাদেশ থেকে ৬ মাস আগে রপ্তানী করা ইলিশ মাছ খাবেন না।
৫. রবিবার মোটামুটি সব কিছুই বন্ধ থাকে, কখাটা মাথায় রাখবেন।
৬. রুপী এবং "চা-নাস্তা" --
---------------------------
আমরা অনেক রুপী নিয়ে গিয়েছিলাম, কারণ শিলং-এ দর কম। ব্যাংকে যাবার সুযোগ হয়নি, কিন্তু সেন্টার পয়েন্টের কাছের এক্সচেঞ্জ গুলোতে ১০০ টাকায় ৭৮ রুপী দিচ্ছিল (১.২৮), যেখানে ঢাকা থেকে ১.২১ রেট-এ রুপী কিনেছি। ডলারেও রেট কম দেয় - ডলারপ্রতি ৬৭/৬৮ রুপী
রুপী বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভবত বেআইনি। কিন্তু কোথাও চেক করে না। বাংলাদেশী টাকা নিয়ে যেতে পারেন। সরাসরি বাংলাদেশী টাকা দিয়ে শিলং-এ রুপী কেনা যায়। কিন্তু উলটোটা করতে চায় না।
একটু বড় এক্সচেঞ্জ গুলোতে পাসপোর্ট চেক করতে চায়। ছোটগুলোতে করে না। কয়েকটা দোকানেও খোঁজ নিতে পারেন। দোকান গুলোতেও এক্সচেঞ্জ করা যায়।
তামাবিল ইমিগ্রেশন (বাংলাদেশ)-কে গ্রুপ প্রতি ১০০ টাকা চা-নাস্তার জন্য দিতে হয়, তা'নাহলে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। বাংলাদেশ কাস্টমস-কেও ১০০ টাকা দিতে হয়েছিল।
বিজিবিকে কিছু দেয়া লাগে নি।
ওপারে ইমিগ্রেশনের আগে বিএসএফ কথা বার্তা বলে, ওদেরকেও কিছু দেয়া লাগেনি। ডাওকি ইমিগ্রেশনে (ভারত) গিয়ে সরাসরি চা-নাস্তার কথা বলা ভাল। তা'হলে ওরাও খুশি হয় আর ঝামেলা করে না। আমাদের ২০০ রুপী দিতে হয়েছে।
ফেরার সময়-ও একই। ফেরার ভারত ইমিগ্রেশন থেকে প্রতিটা লাগেজ-এ (ঘাড়ে ঝোলানো গুলো সহ) একটা চকের দাগ দিয়ে দেয়। ওটা না দেখলে বিজিবি প্রশ্ন করতে পারে।
৭. বর্ডার থেকে শিলং শহর
---------------------------
একেবারে বর্ডারের কাছে শিলং যাবার জন্য যে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকে তারা বেশি ভাড়া চায়। গ্রুপের একজন বা দু'জন যদি একটু সামনে হেঁটে গিয়ে সুমো স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করতে পারে তা'হলে ৫০০ রুপীর মতন বাঁচিয়ে ফেলা যায়। অর্থাৎ, একদম বর্ডারে যদি ২৫০০ রুপী চায়, ভেতরের স্ট্যান্ড থেকে মোটামুটি ২০০০-এ পাওয়া সম্ভব।
আমাদের খরচ হয়েছিল ২০০০ রুপী, টাটা সুমো জিপ, ১০ সিটের। গাড়ির ওপরে লাগেজ বেঁধে রাখার ব্যবস্থা ছিল। ওরা ৩০০০ থেকে শুরু করে। দরদাম ১০০০ বা ১২০০ থেকে শুরু করা ভাল।
৮. ক্লিন ভিলেজ, ব্যালান্সিং রক আর লিভিং রুট ব্রিজ
---------------------------
এই জিনিসগুলো ডাওকির কাছে। ফেরার দিন কাভার করা ভাল। শিলং থেকে ডাওকির রাস্তায় এক জায়গায় মূল রাস্তা থেকে ১৭ কিলোমিটার ভেতরে যেতে হয়। মূল রাস্তা থেকেই আধা ঘন্টার ওপরে লাগে। তার ওপর ওখানে গিয়ে হাঁটতে হয়। কাজেই ফেরার দিন দেখতে চাইলে যাওয়া আসা মিলিয়ে দুই / আড়াই ঘন্টা হাতে রাখা ভাল।
বর্ডার ব্যস্ত থাকে দূপুর বেলা (১১টা থেকে ৪ টা)। ঐ সময় বর্ডার ক্রস করলে সবচে' অল্প সময়ে বের হয়ে যেতে পারবেন। কারণ তখন দুই পক্ষই বড় বড় পণ্য পরিবাহী যানবাহনের দিকে মনোযোগ বেশি দেয়। ছোট গ্রুপ তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়।
বর্ডার বন্ধ হয় ৬ টায়। কিন্তু ৫ টার পর থেকে নাকি ঝামেলা শুরু হয়। কাজেই একটু আগে আগে (৪ টার মধ্যে) বর্ডার ক্রস করতে চেষ্টা করবেন।