স্বচ্ছ নীল জলের রাশি বইছে, সাথে হিমেল হাওয়া। পাহাড়ের ওপরে ছোট একটি গ্রাম। দিনের আলো নিভতেই পুর্ণিমার আলো এসে আলোকিত করে দিলো পুরো একটি গ্রাম। নদীর পাশেই চলছে ক্যাম্পিং, সাথে নিস্তব্ধতার সাথে মিশে গেছে আকাশের সব তারা। পাথরের ভাজে ভাজে বয়ে চলছে স্রোতধারা, শিহরিত মন প্রান তার বয়ে চলার গর্জনে। এসব কোন রুপকথার গল্প নয়। বাড়ির পাশেই খুব কাছাকাছি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি ছোট গ্রাম শ্নোনেংপেডেং। বাংলাদেশের সিলেট জেলার তামাবিল বর্ডার থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে এই অপরুপ সুন্দর গ্রামটি। ডাউকি বর্ডারের ভিসা থাকলেই খুব সহজে আর স্বল্প খরচে ঘুরে আসা যায় জৈন্তা হিলের এই ছোট গ্রামটিতে।
যেহেতু শ্নোনেংপেডেং ভারতের সীমান্তে সেহেতু এখানে ভ্রমনের জন্য ভারতীয় ভিসা নিতে হবে। এই ভিসা নেওয়ার জন্য আপনাকে ডাউকি বর্ডার উল্লেখ করতে হবে, তার সাথে হরিদাশপুরের সব অপশন ই ফ্রী। ভিসা প্রসেসিং এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট সহ জমা দিতে হবে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে। তিন থেকে সাত দিন এর মধ্যেই পেয়ে যাবেন ভিসা। ভিসা নিতে হলে প্রথমে আপনাকে indianvisa-bangladesh.nic.in/visa/ এই ওয়েব লিংক এর ফরম পুরন করতে হবে নির্ভুলভাবে। এপয়েন্টমেন্ট ডেটের জন্য দিনের ১১:৩০ থেকে ১২:৩০ এই সময়ের মধ্যে কয়েকবার চেষ্টা করলেই নিজে নিজে নিতে পারবেন। ডেট পাওয়ার পর যে সকল কাগজ সাথে জমা দিতে হবে: • আপনার পাসপোর্ট। • পাসপোর্ট এর ফটোকপি। • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, যদি না থাকে তাহলে জন্ম নিবন্ধন/চেয়ারম্যান/কমিশনার কতৃক নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি। • বর্তমান ঠিকানার রিসেন্ট মাসের বিদ্যুত/পানি/টেলিফোন বিলের ফটোকপি যার বিল পরিশোধ করা আছে এমন। • নূন্যতম ৬ মাসের ব্যাংক ষ্ট্যাটমেন্ট অথবা কোন ব্যাংক কতৃক নুন্যতম ১৫০ ডলার এনড্রোসমেন্ট স্লিপ ও পাসপোর্ট সিল সহ। • কর্মক্ষেত্রের প্রমান স্বরূপ ছাত্র/ছাত্রী হলে ছাত্র/ছাত্রী পরিচয়পত্রের ফটোকপি। ব্যবসায়ী হলে চলতি ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি (নিজ নামের)ও ভিজিটিং কার্ড। চাকুরীজীবী হলে চাকুরির পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ভিজিটিং কার্ড ও অফিসিয়াল প্যাডে ছুটির মঞ্জুরনামা।
সকাল ৯টা থেকেই এন্ট্রি এক্সিট কার্যক্রম শুরু হয় বর্ডারে। প্রথমে আপনাকে পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পুলিশ অফিসে (যেতে হাতের ডান পাশে) যেতে হবে। সেখানে ছোট একটি ফরম ধরিয়ে দিবে। আপনার নাম,পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদির তথ্য ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লিখতে হবে। নিজে লিখতে না পারলে তাদের বললেও লিখে দিবে। লেখা শেষে জমা দিলে কম্পিউটারে এন্ট্রি দিয়ে পাসপোর্টে এরাইভাল সিল দিয়ে দিবে। এবার চলে যেতে হবে কাস্টমস অফিসে। এখানে আপনাকে ভ্রমণ ট্যাক্সের কাগজ জমা দিতে হবে। সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে ভ্রমণের আগেই ট্যাক্স দিয়ে পেপার নিয়ে রাখবেন। কোন কারনে পুর্বে দেওয়া না থাকলে বর্ডারে দিতে পারবেন সে ক্ষেত্রে ১০০ টাকা অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে। কাস্টমস এর সিল নিয়ে বর্ডার গার্ড কে দেখিয়ে চলে যান ভারত সীমান্তে।
বিএসএফ কে পাসপোর্ট দেখিয়ে একটু হেটে গেলেই পাবেন ভারতীয় ইমিগ্রেশন অফিস। ভিতরে আগে পুলিশ ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট জমা দিয়ে সিল নিয়ে নিন। তারপর কাস্টমস অফিসারের কাছে সিল নিয়ে নিন।
ফেরত আসার সময় ও ভারতীয় ইমিগ্রেশন একইভাবে প্রক্রিয়া শেষ করে চলে আসুন নিজ দেশে। তারপর প্রথমে কাস্টমস অফিস শেষে পুলিশ ইমিগ্রেশন শেষ করলেই সকল কার্যক্রম শেষ হলো। তবে খুব ভালো করে দেখে নিবেন সিল গুলো ঠিকমত দেওয়া হয়েছে কিনা।
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন , বিমানে সিলেট নেমে যেতে হবে তামাবিল বর্ডার। ঢাকা থেকে সরাসরি যেতে চাইলে একটি বাস আছে আহমেদ পরিবহন নামে। সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি রাত ১০ টা ও রাত ১১টায় ছেড়ে জাফলং যায়, সার্ভিস মোটামুটি ভালো ,ভাড়া পড়বে ৪০০ টাকা। এছাড়া, হানিফ, শ্যামলি,এনা,ইউনিক,মামুন, গ্রীন লাইন, লণ্ডন এক্সপ্রেস সহ অনেক বাস ঢাকা সিলেট রুটে যাতায়াত করে থাকে। ঢাকা – সিলেট নন এসি বাসের ভাড়া ৪৮০ টাকা আর এসি বাসের ভাড়া ৯০০-১২৫০ টাকা। সিলেটের কদমতলি বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতি আধা ঘন্টা পর পর ই জাফলং, তামাবিলের বাস ছেড়ে যায়, ভাড়া ৬০ টাকা। তামাবিলে বর্ডার ক্রস করেই পেয়ে যাবেন ট্যাক্সি। এখান থেকে শ্নোনেংপেডেং রিজার্ভ নিলে ২০০-২৫০ রুপি লাগবে। এছাড়া পায়ে হেটে ডাউকি বাজার পৌঁছাতে পারেন সময় লাগবে ১০ মিনিট অথবা বর্ডার থেকে অনেক সময় ডাউকি বাজার ২০ রুপি শেয়ার জিপ যায়। ডাউকি বাজার থেকে শ্নোনেংপেডেং লোকাল জিপ যায় ২০ রুপি করে আর রিজার্ভ ট্যাক্সি নিলে ২০০-২৫০ রুপি লাগবে ১৫ মিনিটের এই পথ পাড়ি দিতে।
কোথায় থাকবেন
শ্নোনেংপেডেং এ থাকার মজাই হলো উমগট নদীর পাশে ক্যাম্প করে থাকা। সেখানে দুইজন থাকার মত তাবু ভাড়ায় মিলে ৫০০-৭০০ রুপিতে। আর বড় তাবু গুলো ৫-৮ জন থাকা যায় সেগুলোর ভাড়া ১২০০-১৫০০ রুপি। এছাড়াও অল্প কিছু কটেজ রয়েছে সিঙ্গেল বেডের ভাড়া পড়ে ৫০০-৭০০ রুপি। সবচেয়ে ভালো হলো হালাতং টুরিস্ট হোমস্টে আর ব্রাইট স্টার সিং। তাবুতে থাকতে চাইলে এদের সাথে যোগাযোগ করলেও হবে কারণ তাদের নিজস্ব তাবু আছে। কটেজগুলো পাহাড়ের উপড়ে আর তাবু নিচে নদীর দু কিনারায়।
গ্রামের মূল অংশে পাহাড়ের উপড়ে খাবারের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো ব্রাইট স্টার রেস্টুরেন্ট। সব ধরনের খাবার পাওয়া যায় এখানে। অর্ডার দিয়ে জাস্ট ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে গরম গরম খাবার পেতে। এছাড়া কিছু দোকান রয়েছে শুকনো খাবার, কোল্ড ড্রিঙ্ক পাওয়া যায়। আর পাহাড়ের নিচে নদীর কাছাকাছি দু একটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে সেখানেও খাবার মিলবে। এছাড়া চাইলে নিজেরাও পাক করে খাবার খাওয়া যায় পিকনিকের মত। তবে একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় এখানে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই নিরবতা নেমে আসে। সন্ধ্যা ৬-৭টার ভিতর সকল দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। তাই এর আগেই খাবার দাবার সেড়ে নিতে হবে।আর সকাল ৯/১০ টা পর্যন্ত কোন দোকান খোলা হয় না।
শ্নোনেংপেডেং তামাবিল বর্ডারের খুব কাছাকাছি মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে জৈন্তা হিলে অবস্থিত প্রকৃতির অপরুপ লাবণ্য এই গ্রামটি। নীল স্বচ্চ জলের আভা দেখে ধা ধা মনে হলেও আসলে তা বাস্তবিক ই এমন। জলের উপর ভেসে থাকা নৌকা গুলো দেখে মনে হবে পুরোটাই কাল্পনিক। বোটিং,কায়াকিং,জিপ লাইন,স্নোরকেলিং নানাবিধ এক্টিভিটিসে ভরা এই শ্নোনেংপেডেং। আর এই গ্রামের সবচেয়ে আকর্ষনীয় হলো পাহাড়ের দুই প্রান্তের যাতায়াতের জন্য লোহার তৈরি বেইলি ব্রিজ। একসাথে ৫-৮ জনের বেশি এই ব্রীজে উঠা যায় না।
বোটিং- পাহাড় থেকে নিচে বেইলি ব্রীজের নিচেই আছে বোটিং ঘাট। সকল এক্টিভিটি এখান থেকেই শুরু। একটি ছাউনি রয়েছে যেখানে সকলের বোট রেজিষ্টার করে রাখে। উমগট নদীতে বোটিং এর জন্য খরচ করতে হবে ৫০০ রুপি। ডিঙ্গি নৌকায় ৫-৬ জন পর্যন্ত উঠা যায়। পুরোটা ঘুরে আসতে সময় লাগে মোটামুটি ৪০-৬০ মিনিট। মাঝি বেয়ে নিয়ে যাবে আপনাকে নদীর স্বচ্চ নীল জলের ধারা ছাড়িয়ে দুধ সাদা জলের ছোট প্রপাত অবধি। এর মাঝে দেখবেন হাজার হাজার ছোট বড় পাথরের বোল্ডার অনেকটা আমাদের বান্দরবান এর তিন্দুর মত দেখতে।
কায়াকিং- কায়াকিং এর জন্য এই ঘাট থেকে জনপ্রতি ২০০ রুপি খরচ করতে হবে। একটি কায়াকে দুইজন ধারণক্ষমতা। পাথুরে এই নদীতে কায়াকিং করার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সারাজীবন মনে রাখার মত। স্বচ্চ নীল জলে কায়াকিং করে উপভোগ করতে পারেন ভ্রমণের আনন্দ। তবে লাইফ জ্যাকেট থাকা মাস্ট। এটা বোট ভাড়া নেওয়ার সময়ই কর্তৃপক্ষই আপনাকে পড়িয়ে দিবে।
জিপ লাইন- বেইলি ব্রিজ পাড় হলে সামনে তাকালেই দেখা যাবে এক পাশ থেকে আরেক পাশে মোটা একটা ক্যাবল ঝুলছে। এখানেই আপনি এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যেতে পারবেন। বোটিং করার সময় মাঝি কে বললেই সে ব্যবস্থা করে দিবে। প্রতিবার জিপ লাইনিং এর জন্য আপনাকে ৩০০ রুপি খরচ করতে হবে। লাইফ জ্যাকেট, হার্নেস আর গ্লোভস পড়িয়ে পরিষ্কার ইংরেজিতে বুঝিয়ে দিবে গাইড কি করতে হবে। তেমন জটিল কিছু নেই। বাম হাত সর্বদা ইজি থাকবে আর ডান হাতে ব্রেক, সেটা ইজি ভাবে ধরে থাকলেই হবে। যদি স্পীড বেশি মনে হয়ে বা শেষ প্রান্তে পৌছে যান তখন শুধু ডান হাতে হাল্কা প্রেসার দিলেই ব্রেক হয়ে যাবে। এছাড়াও অপরপ্রান্তে গাইডের সহযোগি থাকবে সেখানে আপনাকে রিসিভ করবে।
জাম্পিং- জিপ লাইনের অপরপ্রান্তে লাইফ জ্যাকেট পড়ে জাম্প দেওয়ার জন্য ভালো জায়গা। এর জন্য কোন টাকা পয়সা খরচ করতে হবেনা। একটু গভীরতা দেখে উচু পাথর থেকে যেখানে ইচ্ছে লাফিয়ে পড়তে পারেন। তবে জায়গাটা ভালো করে দেখে নিতে হবে যেন নিচে পাথর না থাকে। এই জন্য সবচেয়ে ভালো মাঝির সহায়তা নেওয়া।
স্নোরকেলিং- জিপ লাইন ছেড়ে আরেকটু সামনে আগালেই মিলবে স্নোরকেলিং করার জন্য যাবতীয় সরঞ্জাম ভাড়ায়। ৩০ মিনিটের জন্য স্নোরকেলিং করতে খরচ হবে ৫০০ রুপি। নীল জলের তলদেশে ঘুরে ঘুরে দেখে নিতে পারেন প্রকৃতির ভয়াবহ কিছু রুপ। সাথে কত শত চেনা অচেনা মাছ। শুধু উপর থেকে নয় জলের তলেও যে উমগটের এক বিশাল সৌন্দর্য লুকায়িত আছে স্নোরকেলিং না করলে তা বুঝতেই পারবেন না।
ক্যাম্পিং- ভ্রমণের আনন্দ পুরোপুরি সোনায় সোহাগা করতে ক্যাম্পিং এর বিকল্প নাই। পাহাড়ের নিচে নদীর দু পাশেই রয়েছে ক্যাম্পিং এর জন্য উপযুক্ত জায়গা। ভাড়ায় তাবু মিলে এখানে। লোকজন সংখ্যায় বেশি হলে আগে থেকে বুক করে যাওয়া ভালো। রাতের নিরবতায়, স্রোতের জলধারায়, পুর্ণিমার আলোর সাথে কাটানো একটি রাত সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে। ক্যাম্প ফায়ারের সাথে সাথে গান, গল্পের আড্ডা এনে দিবে ভিন্নতা। দুজনের জন্য ৫০০-৭০০ রুপি আর ৪-৫ জনের জন্য ১২০০-১৫০০ রুপি ভাড়ায় তাবু মিলে এখানে।
মেঘয়ালয়ের রিওয়াই গ্রামে অবস্থিত প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন এই ৫০ মিটার দীর্ঘ জীবন্ত গাছের শেকড়ে তৈরি ব্রিজটি । প্রতিনিয়ত বাড়ছে এর শেকড়ে আর একারনেই এর নাম লিভিং রুট ব্রীজ। সেতুর নিচে পাথুরে ঝিড়ি বেয়ে বয়ে গেছে গ্রাম্য থাইলং নদী। অনেকগুলো সিড়ি বেয়ে পথ নির্দেশিকা দেখে দেখে আপনাকে আগাতে হবে ব্রীজের দিকে। এখানে প্রবেশের জন্য কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। রিজার্ভ জিপ বা ট্যাক্সি নিয়ে ডাউকি থেকে খুব সহজেই ঘুরে আসা যায় শিলং এর পুরাতন ঐতিহাসিক এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
লিভিং রুট ব্রীজের খুব কাছে এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এই গ্রামটির নাম মৌলিনং ভিলেজ। এখানে গিয়ে চোখ বুলাতেই বুঝে যাবেন কেন এই গ্রামটি এশিয়ার পরিচ্ছন্ন গ্রাম। চারিদিকে হাজারো ফুলের বাহার। প্রতিটি বাড়ির সাম্নেই ফুল গাছ আর নানা রকম পাতাবাহার গাছের সম্ভার। কোথাও কোন ময়লা আবর্জনা তো দুরের কথা ধুলা পর্যন্ত দেখা মিলে না। এখানে লাঞ্চ করার জন্য একটি রেস্টুরেন্ট আছে। ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন প্রতিটি বাড়ি।
ব্যালেন্সিং রক
মৌলিনং ছেড়ে আরেকটু সামনে আগাতেই চোখে পড়বে ব্যালেন্সিং রক নামে আরেক অদ্ভুত দর্শনীয় স্থান। বিশাল দানব আকৃতির একটি পাথর দাঁড়িয়ে আছে খুব ছোট একটি পাথরের উপর। ঝড় তুফান কিছুই নাড়াতে পারেনা তাকে। ছোট পাথরের উপর তার দাঁড়িয়ে থাকা দেখলেই নামকরনের সার্থকতা খুজে পাওয়া যায়।
রিওয়াই গ্রাম ছেড়ে ডাউকির দিকে আসতেই পথে পড়বে অপরুপ সুন্দর উমক্রাই ঝর্নাটি। ঝিরি বেয়ে এর জল চলে গেছে বাংলাদেশের দিকে। বড় বড় পাথরের বুল্ডারে নেমে চলে যেতে পারেন ঝর্নার খুব কাছাকাছি।
উমক্রাই ছেড়ে একেবারে বর্ডারের কাছেই দেখা মিলবে বড়হিল ফলসের যাকে আমরা সিলেট থেকে পাংতুমাই নামে চিনি। লোহার বেইলি ব্রীজে দাঁড়িয়ে দেখে নিতে পারেন এই ফলসের ভয়াবহ রুপ, লাবণ্য আর গর্জন। পাশাপাশি সেখান থেকে বাংলাদেশের সিলেটের গোয়াইনঘাটের অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে ভুলে যাবেন না যেন।
অবশেষে বর্ডার এর কাছে আসতেই পেয়ে যাবেন সেই বিখ্যাত ডাউকি ব্রিজ যা দেখার জন্য আমরা ছুটে যাই জাফলং জিরো পয়েন্টে। এখানে চাইলে বোটিং করতে পারবেন তবে খরচ টা একটু বেশি। প্রতি নৌকা ৬-৭ জন উঠা যায় ৭০০ রুই ভাড়া।
পুর্ব জৈন্তা হিলের আমলারেম গ্রামে অবস্থিত নীল জলের এই প্রাপাতের ভিন্ন ভিন্ন রুপ আছে। এক এক সিজনে সে এক এক রুপ ধারন করে। তবে ভরা বর্ষায় পুর্ন রুপে ধরা দেয় আর শীতে নীলের আভার হয়ে পুর্নতা পায়। পার্কিং থেকে কিছুটা নিচে ঝিড়ি পথ ছেড়ে আবার কিছুটা উপড়ে উঠলেই কাউন্টার পাবেন। জনপ্রতি ৪০ রুপি আর ক্যামেরার জন্য ২০ রুপি দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এখানে ১০০ রুপির বিনিময়ে বোটিং করতে পারবেন। লাইফ জ্যাকেট ভাড়া নিয়ে ঝর্নার নীল জলে মন ও দেহের সকল নীল বেদনা ঝেড়ে ফেলতে পারেন। উপড়ের দিকে একটি কৃত্রিম বাধ দিয়ে বোটিং ব্যবস্থা করা হয়েছে । আর তার ছুটে চুলা জল গড়িয়ে পাহড়ে পড়ছে নিচে। আর তা বয়ে গেছে বিশাল পাথুরে ঝিরি বেয়ে। নিচে নামার জন্য সিড়ি রয়েছে।
ভ্রমন পরিকল্পনা কয়েকভাবে সাজানো যায়। সবচেয়ে ভালো হয়ে নুন্যতম ৪-৬ জনের গ্রুপ করে গেলে। তাহলে খরচ এভারেজে কমে যাবে। দুইদিনের জন্য যেতে চাইলে প্রথমদিন বর্ডার থেকে গাড়ি নিয়ে সরাসরি শ্নোনেংপেডেং। তাবু বা কটেজ বুক করে সারাদিন শ্নোনেংপেডেং এর আশপাশ ও এক্টিভিটিগুলো শেষ করা। পরিদন রিজার্ভ জিপ বা ট্যাক্সি নিয়ে ক্রাংসুরি জলপ্রপাত ঘুরে ডাউকি হয়ে বর্ডারে।
এছাড়া অন্যভাবে করা যায় তা হলো, প্রথমদিন শ্নোনেংপেডেং ঘুরে রাতে শ্নোনেংপেডেং থাকা। পরদিন একটি জিপ বা ট্যাক্সি রিজার্ভ করে লিভিং রুট ব্রিজ, মৌলিনং ভিলেজ,ব্যালেন্সিং রক, উমক্রাই ফলস, বড়হিল ফলস, ডাউকি ঘুরে শ্নোনেংপেডেং রাতে থাকা , পরদিন ক্রাংসুরি জলপ্রপাত ঘুরে বর্ডারে চলে আসা ।
শ্নোনেংপেডেং থেকে ক্রাংসুরি ও ডাউকি ঘুরে বর্ডারে আসতে ট্যাক্সি বাজিপ ১৫০০ রুপি খরচ হবে। শ্নোনেংপেডেং থেকে লিভিং রুট ব্রিজ, মৌলিনং ভিলেজ,ব্যালেন্সিং রক, উমক্রাই ফলস, বড়হিল ফলস, ডাউকি ঘুরে শ্নোনেংপেডেং রাতে থাকা ও পরদিন ক্রাংসুরি ঘুরিয়ে বর্ডার নামিয়ে দেওয়া ৩০০০-৩৫০০ রুপি খরচ হবে।
• বর্ডারে অবৈধ কিছু বহন করবেন না।
• সাথে এক্সট্রা কয়েক কপি ছবি ও পাসপোর্টের ফটোকপি রাখবেন যা আপনার হোটেলে/সিম কেনার সময়/অন্যান্য কাজে লাগবে।
• ছুটির প্রমানপত্র হিসেবে যেটা ভিসার এপ্লিকেশনের সাথে দিয়েছিলেন বর্ডার ক্রসের সময় উহা দেখাতে হবে তাই তার কপিটি সাথে রাখবেন।
• ডলার নিয়ে যাবেন বাংলা টাকা বা রুপি না নিয়ে।
• কোন দালালের কথায় কান না দিয়ে যাওয়ার আগে একটা খসড়া প্লান করে ফেলেন এবং সেই প্লান অনুযায়ী ভ্রমন করে আসুন।
• স্থানীয় কারো সাথে খারাপ আচরন করবেন না। অথবা সেখানের ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক-আশাক নিয়ে সমালোচনা করবেন না।
• নিজ দেশের দুর্নাম করবেন না। এবং সেখানে থাকা অবস্থায় এমন কোন আচরন বা ব্যবহার দেখাবেন না যাতে লোকে দেশের দুর্নাম গায়।
• বর্ডার থেকে শেয়ার জীপে যাতায়াত করুন খরচ কম হবে ।
• ফিরে আসার সময় বর্ডারে অবশিষ্ট সব রুপিকে আবার টাকায় ভাঙ্গিয়ে নিন।
• ভ্রমণের কোন স্থান ময়লা, আবর্জনা করবেন না।
• শীতে গরম কাপড় নিতে ভুলবেন না।
• বাহিরে বের হলে সব সময় পাসপোর্ট সাথে রাখবেন।